কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাইকারি বাজারে ছোলার বড় দরপতন হয়েছে। রমজান উপলক্ষে বাড়তি আমদানি ও গ্রীষ্ম মৌসুমের কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় দুদিনে পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমেছে মণে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৩০০ টাকা। এক-দেড় মাস ধরে বাড়তি দামে কেনা ছোলার দাম হঠাত্ কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ছোলার দাম কমতে শুরু করে। দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাজারে ক্রেতা সংকটে পড়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। দাম কম থাকলেও গতকাল ক্রেতা না থাকায় খাতুনগঞ্জে পণ্যটির বেচাকেনা খুব বেশি হয়নি। ছোলা বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা গরম ও অতিরিক্ত আমদানিকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে এবার সাধারণ মানুষ ইফতারিতে ছোলার পরিবর্তে মৌসুমি ফল বেছে নিতে পারেন। এছাড়া চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে।
এবার বাজারে বিক্রি হওয়া ছোলার প্রায় শতভাগই আমদানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। গতকাল ভালো মানের প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭৮০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়েও একই মানের ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার টাকার ওপর। গত সপ্তাহে মাঝারি মানের প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৯০০ টাকায়, যা গতকাল ২ হাজার ৭৪০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গতকাল নিম্নমানের প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫৮০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে সর্বনিম্ন ২ হজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বাজারদর অনুযায়ী, দুদিনের ব্যবধানে ছোলার দাম কমেছে মণে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। খাতুনগঞ্জের ছোলা আমদানিকারক সোলায়মান বাদশা জানান, ১০-১৫ দিন আগের তুলনায় মণপ্রতি ছোলার দাম কমেছে মানভেদে ১০০-২০০ টাকা। পর্যাপ্ত আমদানি, পাইপলাইনে থাকা ছোলা বাজারে আসার কারণে দাম কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
খাতুনগঞ্জ ডাল মিল মালিক সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দেব খোকন বলেন, ছোলার কোনো ক্রেতা নেই বললেই চলে। মূলত গ্রীষ্ম মৌসুমে রমজান শুরু হওয়ায় এবার ছোলা কিনছেন না ক্রেতারা। এদিকে ক্রেতা ও চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম দামে পণ্যটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ ব্যাংকের টাকায় ব্যবসা করলে ব্যাংককে টাকা ফেরত দিতে হবে। তাই এক-দেড় মাস ধরে বাড়তি দামে ছোলা কিনলেও ব্যবসায়ীদের এখন কম দামে ছোলা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে বাজারের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা বেশি।
কারণ হিসেবে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বেশির ভাগ আমদানিকারক এরই মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে দাম পড়ে যাওয়ায় এ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় প্রায় ৬০ হাজার টন বেশি ছোলা আমদানি হওয়ায় দাম কমছে বলে মনে করছেন পাইকারি বিক্রেতা হক ট্রেডিংয়ের মালিক আজিজুল হক। তিনি বলেন, ছোলার চাহিদা আছে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টন। আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টন। ফলে বাজারে প্রভাব পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে ছোলার চাহিদা কমছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোজাদাররা ছোলার বদলে মৌসুমি ফল বেছে নিতে পারেন। এ কারণে পণ্যটির বিক্রি কমে গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ছোলা আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার টন। অথচ ট্যারিফ কমিশন ও সরকারি হিসাবে প্রতি মাসে ছোলার চাহিদা গড়ে ১২ হাজার টন অর্থাত্ পুরো বছরের চাহিদা ১ লাখ ৪৪ হাজার টন। এমনকি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট আমদানি হয়েছে আরো ৫৬ হাজার টন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা আমদানির শীর্ষে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্মাইল ফুড প্রডাক্টস। ২০১৬ সালে ছোলা আমদানিতে দ্বিতীয় স্থানে বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সিলভার ফুড প্রডাক্টস, তৃতীয় লাকি ট্রেডিং, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে রুবি ফুড প্রডাক্টস ও গাজী ট্রেডিং।
সুত্র, বনি্ক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম