‘দুর্ভোগে হাওড়পাড়ের চার হাজার জেলে পরিবার’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন হাওড়পাড়ের চার হাজার জেলে পরিবার। সাম্প্রতিক সময়ে অকাল বন্যায় হাওড়ের ফসল ডুবে যাওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের ত্রাণ দেয়া হলেও তা পাননি জেলেরা। তাই বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পোনামাছ ধরছেন তারা। প্রতিবেদন দৈনিক বনিক বার্তা।
জানা গেছে, প্রতি বছর হাকালুকি হাওড় থেকে মৌলভীবাজারের মাছের বড় জোগান পাওয়া যায়। বছরে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয় এ হাওড় থেকে। গত এপ্রিলে অকাল বন্যায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওড়ে আবাদকৃত ধান তলিয়ে যায়। এ ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হওয়ায় পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এতে প্রচুর মাছ মারা যায়। মৎস্য বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ সময় হাকালুকি হাওড়ে আনুমানিক ২৫ টন মাছ মারা গেছে। এর পর থেকে হাওড়ে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত হাওড়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাওড়ের ওপর নির্ভরশীল জেলেরা। দেখা যায়, হাকালুকি হাওড়ে গুটিকয়েক নৌকায় মাছ ধরার জন্য জাল ফেলছেন জেলেরা। তবে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেকে পোনামাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের সাদীপুর গ্রামের বাসিন্দা বদল মিয়া জানালেন, তার ছয় সদস্যের পরিবার হাওড়ের মাছের ওপর নির্ভরশীল। এখনো হাওড়ে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওড়পাড়ের বাজার ইসলামপুর। জেলেরা মাছ ধরে এনে এ বাজারে বিক্রি করেন। এ বাজারে মাছ কিনতে আসা রাজনগর উপজেলার রক্তা গ্রামের ব্যবসায়ী ফয়জু মিয়া জানান, এখন হাওড়পাড়ে মাছের চেয়ে ব্যবসায়ী বেশি। যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম অনেক বেশি। তাই জেলেদের মতো তারাও বেশ কষ্টে আছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এপ্রিল, মে ও জুন— এ তিন মাস মাছের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে নয় ইঞ্চির চেয়ে ছোট শোল, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, আইড় ও বোয়ালসহ সব ধরনের পোনামাছ ধরা ও বিক্রি এবং বেড়জালসহ ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটারের কম ফাঁকবিশিষ্ট জাল ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসে হাওড়ের মাছ মরে যাওয়ায় জেলেরা বাধ্য হয়েই পোনামাছ ধরছেন। সাদীপুর গ্রামের আকলুছ মিয়া জানান, তারা এখন অসহায়। নিরুপায় হয়েই পোনামাছ ধরতে হচ্ছে তাদের। নয় তো পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, উপজেলায় ১ হাজার ৭০০ নিবন্ধিত জেলে আছেন। জেলেরা মোটামুটি কষ্টের মধ্যে আছেন। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে ত্রাণ দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা ত্রাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। মাসখানেক পরে মাছ বাড়বে। তখন এ অবস্থা আর থাকবে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওড় এলাকায় চার হাজার জেলে নিবন্ধিত আছেন। হাওড়ে মাছের ঘাটতি কাটাতে বিল নার্সারির (হাওড় এলাকার বিল বা পুকুরে পোনা উৎপাদন) জন্য ২৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া গেছে। এ টাকা দিয়ে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় ৩০টি বিল নার্সারি করা হচ্ছে। এসব বিলে রুই, কাতলা ও মৃগেলজাতীয় ২৬ লাখ ৪০ হাজার পোনা উৎপাদন করা হবে। এরই মধ্যে বিল নার্সারির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে হাওড়ে রুই, কাতলা ও মৃগেলজাতীয় পোনা মাছ অবমুক্তের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আগামী ২০ জুনের মধ্যে পোনামাছ হাওড়ে ছাড়া হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস আকন্দ বলেন, হাওড়ে পুঁটি, টেংরা, মলাসহ ছোট মাছের পোনা দেখা যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে হাওড় থেকে মাছ হারিয়ে যায়নি। মাছের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিল নার্সারি গড়ে তোলা ও পোনা ছাড়া হবে। মা ও পোনামাছ যাতে কেউ না ধরে, সেজন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম