কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকের নামে সরকারি গুদামে গম সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট। খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা এ অপকর্ম করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রাজশাহীর চার জেলায় ১ লাখ ৯ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমিতে গম আবাদ করা হয়। এ থেকে গম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ১৮৪ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাবে, এ অঞ্চলে কৃষি উপকরণ-সহায়তা পাওয়া কৃষক ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৪ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই এ বছর গম চাষ করে সরকারি গুদামে দেয়ার সুযোগ পাননি। খবর দৈনিক বনিক বার্তা।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষক ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৫ জন। এ বছর এ জেলায় ৩১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ৯৮ হাজার ৬৬৭ টন। নওগাঁয় এ বছর ২৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ২১ হাজার ৯১৫ টন গম উৎপাদন হয়েছে। এ জেলায় কৃষক ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৬৯ জন। রাজশাহীতে ২৬ হাজার ৮৪১ হেক্টরে ৮৭ হাজার ৫৪২ ও নাটোরে ২১ হাজার ৯১৫ হেক্টরে ৭৯ হাজার ৬২৫ টন গম উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩০ ও নাটোরে ৩ লাখ ৭ হাজার ৯৯০ জন কৃষক রয়েছেন।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর জানায়, এ বছর রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় সরকারি উদ্যোগে ৩৪ হাজার ৪৬৯ টন গম কেনা হবে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৫ হাজার ৩৩১ টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮১৯, নওগাঁয় ৬ হাজার ৩৯৯, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬ হাজার ৮৬০, পাবনায় ৮ হাজার ৪৪৮, সিরাজগঞ্জে ১ হাজার ৪৯০, বগুড়ায় ৫৪৪ ও জয়পুরহাট থেকে ৪৭২ টন গম কেনা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মে পর্যন্ত বিভাগজুড়ে ১৬ হাজার ৮৩০ টন গম সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ গম সংগ্রহ হয়েছে চাঁপানবাবগঞ্জে। আর বগুড়ায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ।
আঞ্চলিক খাদ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, নীতিমালা অনুযায়ী এ বছরও কৃষকের কাছ থেকে গম কেনার কথা। এ বছর প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা। গম ক্রয় শুরু হয়েছে গত ১৮ এপ্রিল। এ কার্যক্রম চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গমের দাম ২০ টাকা। কেজিতে ৮ টাকা লাভে বাইরে থেকে কেনা গম খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছেন খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা। প্রতি বস্তায় কমিশনও পাচ্ছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, আগেভাগেই গোপন বৈঠক করে গম কেনায় নেমেছে চক্রটি। খাদ্যগুদামগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নেতা ও ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করেছেন কৃষকের কৃষি ভর্তুকির কার্ড। কৃষি ভর্তুকি কার্ডে সংশ্লিষ্ট কৃষকের স্বাক্ষরের সঙ্গে ওজন, মান ও মজুদ ফরমের স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। সেটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংগ্রহ হচ্ছে নিম্নমানের গম।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী খাদ্যগুদামে ৯৭০ টন এবং ওই উপজেলার কাঁকনহাট খাদ্যগুদামে ৩২৯ টন গম কেনার কথা। তবে কৃষকদের গম ছাড়াই পূরণ হওয়ার পথে ওই লক্ষ্যমাত্রা। স্থানীয় সূত্র বলছে, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ওয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস কৃষকদের নামে ওই গম সরবরাহ করেছেন। দিনাজপুর থেকে নিম্নমানের গম এনে দেয়া হয়েছে গুদামে।তবে কৃষকদের গম দেয়ার কথা অস্বীকার করেন জাহাঙ্গীর আলম ও ওয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন গোদাগাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শিহাবুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, কয়েকজন কৃষক পঞ্চগড়-দিনাজপুর থেকে এনে গুদামে গম ঢোকাচ্ছেন। জাহাঙ্গীর আলম ও ওয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস গম দিচ্ছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। বাইরে থেকে কিনে এনে সরকারি গুদামে গম সরবরাহ বিধিবহির্ভূত বলে জানিয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি দপ্তর থেকে পাওয়া কৃষক-সহায়তার কার্ড দেখেই খাদ্যগুদামগুলোয় গম কেনা হয়। গম কেনার সময় মিলিয়ে দেখা হয় কৃষকের নাম-স্বাক্ষরসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। শেষে গমের মূল্য পরিশোধ করা হয় কৃষকের ব্যাংক হিসাবে। এ নিয়ে অনিয়মের সুযোগ নেই।’তবে কৃষকের নামে কেউ গম সরবরাহ করলে তাও বোঝার উপায় নেই বলে স্বীকার করেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এছাড়া বিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
কৃপ্র/এম ইসলাম