কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যশোর ও খুলনার ভবদহ অঞ্চলের ২৭টি বিলের পানি আটকিয়ে মাছের ঘের করছে একটি মহল। ফসলি জমি, খাসজমি ও খাল দখল করে অপরিকল্পিতভাবে এসব ঘের নির্মাণের চেষ্টা চলছে। এটি হলে যশোর সদরের একাংশ, অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা এবং সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ৫৯০টি গ্রামের প্রায় সাত লাখ মানুষ ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হবে। খবর বনিক বার্তা অনলাইনের।
এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে ভবদহ আন্দোলন কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এরই মধ্যে কেশবপুরের কাদার বিল, বোয়ালিয়া বিল ও সরসকাটি বিলে ঘের করার চেষ্টা করা হলে স্থানীয়রা তা প্রতিরোধ করে। বর্তমানে কপোতাক্ষ নদ সংস্কারকাজ চলমান। কপোতাক্ষের দুই পাড়ে এবার দু-তিন ফসলি জমিতে আবাদও হয়েছে। সংস্কারের ফলে ভবদহ এলাকার অনেক বিল চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠছে। এ অবস্থার মধ্যেই বিলের পানি আটকিয়ে ঘের নির্মাণে অপচেষ্টা চলছে।
জানা যায়, ১৯৬১ সালে ভবদহ অঞ্চলে যশোরের মণিরামপুরের আড়পাতা, বিলকপালিয়া, অভয়নগর উপজেলার দামুখালি, ভবানিপুর, দত্তগাতি, বারান্দি, চুমড়ডাঙ্গা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাটেঙ্গা, চেঁচোড়ি, বরুণাসহ ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশনে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে ২৭ বিলের বৃষ্টির পানি এ স্লুইস গেট দিয়ে নিষ্কাশন করা হয়। ১৯৮৬ সালে স্লুইস গেটে পলি জমে এ অঞ্চলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভবদহ অঞ্চলের বিলপাড়ের কুলটিয়া, মশিয়াহাটি, মহিষদিয়া, পোড়াডাঙ্গা, সুজাতপুর, ডুমুরতলা, হাটগাছা, সুন্দলীসহ কয়েকশ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে বিলে ফসল না হওয়ায় দেখা দেয় চরম খাদ্য সংকট। তখন থেকেই বিলের পানি ভুক্তভোগীরা আন্দোলন করে আসছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বিলের পানি আটকিয়ে ঘের করার পাঁয়তারা চলছে।
ভবদহ আন্দোলন কমিটি আরো জানায়, ঘের করার চেষ্টার বিরুদ্ধে অভয়নগর উপজেলার ঝিকরার বিলে কৃষকরা জমি রক্ষার সংগ্রাম করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘের মালিকরা বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এছাড়া ভবদহ এলাকার বিলকপালিয়ায় জোয়ারাধার (টাইডার রিভার ম্যানেজমেন্ট— টিআরএম) প্রকল্প এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রশ্ন উঠেছে শ্রীহরি নদী ড্রেজিং কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও।
আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ জানান, সরকার টিআরএম করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে এর ড্রেজিং কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল জানান, এরই মধ্যে এ অঞ্চলের সাত উপজেলার সব বিল দখল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রভাবশালী ঘের মালিকরা। কিছু কিছু ফসলি জমি দখলও করে নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভবদহে ফের জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে মানুষ। এদিকে ঘের মালিকরা চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪০০ বিঘা জমি এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন অভয়নগরের বিলঝিকরা গ্রামের কৃষক নূরুল আমিন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা বলছেন, তারা জলাবদ্ধতা দূর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালে কেশবপুর উপজেলার বিল খুকশিয়ায় তিন বছর মেয়াদি জোয়ারাধার চালু করা হয়। প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ডায়েরখালি ও গোরসয়াল নামক স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে বিলের সঙ্গে হরি নদীর সংযোগ দেয়া হয়। এ সময় বিলে কোনো ফসল না হলে এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় পাউবো। তবে বিল দখল করে ঘের নির্মাণের বিষয়ে তাদের জানা নেই বলে জানান।
কৃপ্র/এম ইসলাম