কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁওয়ে আম ও লিচুর উৎপাদন বাড়ছে। প্রতি বছরই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাগান। তবে আড়ত ও সংরক্ষণের অভাবে পচে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ফল। এতে প্রতি বছরই আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষি বিভাগ বলছে, স্থানীয়ভাবে ফল প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করা গেলে এভাবে ফল পচে নষ্ট হওয়া রোধ করা সম্ভব হবে। জেলায় একটি সবজি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপনের কথা হলেও ফল প্রক্রিয়াকরণে সরকারি বা বেসরকারি কোনো উদ্যোগের সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল, হরিপুর, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী ও সদর উপজেলায় আম ও লিচুর চাষ বাড়ছে, প্রতি বছর নতুন নতুন বাগান হচ্ছে। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া ফল চাষে উপযোগী হওয়ায় এই কৃষি ব্যবসাটি জনপ্রিয় হচ্ছে। বাগান করে দূর হচ্ছে বেকারত্ব, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। এখানে অধিকাংশ বাগান মালিক গাছে মুকুল আসার পর পরই ব্যবসায়ীদের কাছে দাম ধরে ফল বিক্রি করেন। লিচু ও আম বাগানগুলো চুক্তিতে কিনে নেন রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বাগানের আকারভেদে প্রতিদিন কাজ করেন ২০ থেকে ২০০ শ্রমিক। স্থানীয় শ্রমিক ছাড়াও এসব বাগানে কাজ করতে আসেন বিভিন্ন জেলার শ্রমিক।
এখন চলছে ফল সংগ্রহের সময়। ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে ফল সংগ্রহের পর স্থানীয় বাজারে কিছু বিক্রি করেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন পাইকাররা। তবে বাজারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পাইকাররা ঠাকুরগাঁও পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক ফল নষ্ট হয়ে যায়। আবার দূরে নিয়ে যাওয়ার সময়ও অনেক ফল নষ্ট হয়। সদর উপজেলার খোচাবাড়ি এলাকার বাগান মালিক আব্দুল লতিফ, সত্যপীর ব্রিজ এলাকার মামুন, টুটুলসহ বেশ কয়েকজন জানান, তারা সাধারণত নিজেরা ফল চাষ করেন না। বাগানে মুকুল আসার পর পরই ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেন। তারা বলেন, আমরা দেখছি, বাগান থেকে ফল তোলার পর সংরক্ষণের অভাবে অনেক ফল নষ্ট হয়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি কৃষি বিভাগ নজরে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
রাজশাহী নাটোর ও সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী রফিকুল জানান, এই বাজার থেকে দূর-দূরান্তে ফল নিয়ে যাওয়ার সময় গরমের কারণে প্রতি বছর অনেক টাকার ফল নষ্ট হয়ে যায়। ফলগুলো নষ্ট হওয়ার আগেই যদি কাজে লাগানো যেত, তাহলে আর তাদের লোকসান গুনতে হতো না। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক একেএম মাউদুদুল হক বলেন, এ অঞ্চলের চাষীরা ফলের বাগান করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। আর এ কারণে জেলায় নতুন নতুন বাগান গড়ে উঠছে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
তবে তিনি স্বীকার করেন, উৎপাদিত লিচুর ১৫ ভাগ, আম ও কাঁঠালের ২০ ভাগ পচে যায়। সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে এ জেলায় যদি ফল প্রক্রিয়াকরণের কোনো কারখানা স্থাপন করা হয়, তাহলে এভাবে ফল নষ্ট হওয়া রোধ করা যেত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পাঁচ উপজেলায় ২ হাজার ৭৪ হেক্টর জমিতে আম ও প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ থেকে ৩৪ হাজার ৭৮৫ টন আম এবং ৪ হাজার ৮২৯ টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম