ডা. মো. ফজলুল হক: আঠালী ক্ষুদ্রাকায় রক্তচোষা প্রাণী। গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীর শরীর থেকে রক্ত চুষে বেঁচে থাকার পাশাপাশি এরা বংশবিস্তার করে মারাত্মক রোগ ছড়ায়। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, হরিণ, বাঘ, সাপ, ভাল্লুক, শিয়াল, সিংহ, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি প্রাণীর শরীরে বহিঃপরজীবী হিসেবে আঠালী বাস করে। মানুষসহ অধিকাংশ প্রাণীতে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া আঠালীর মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে গবাদি পশুতে বেবিসিয়োসিস, এনাপ্লাসমোসিস, থাইলেরিয়াসিস ইত্যাদি রোগের কারণ এই আঠালী। আঠালীর লালা থেকে প্যারালাইসিস বা টিক টক্সিকোসিস নামক রোগও হতে পারে। উল্লেখ্য একটি আঠালী ২৭/২৮ দিনে তার শরীরের ওজনের ৫০গুণ রক্ত শোষণ করতে পারে যার পরিমাণ প্রায় ৩ সি.সি. অর্থাত্ দৈনিক প্রায় ০.১০ সি.সি।
আঠালী সব ঋতুতেই দেখা যায় তবে গরম ও বর্ষাকালে প্রদুর্ভার ও জন্মহার বেশি। এদের রক্ত শোষণে প্রাণীতে রক্ত শূন্যতা, চর্মরোগ দেখা দেয়। দুগ্ধবতী গাভীর দুধ অর্ধেকের নিচে নেমে আসে। চামড়ার গুণগত মান কমে যায়। পৃথিবীর সব দেশে আঠালী থাকলেও বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এদের দেখা যায়, তবে রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে বেশি।
আঠালী দু প্রকার। ১. শক্ত আঠালী ও ২. নরম আঠালী। কিছু কিছু আঠালী গবাদি পশুর চামড়ার সাথে কামড় দিয়ে লেগে থাকে এবং কিছু আঠালী রক্ত খেয়ে রাতের বেলা স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, বাঁশ অথবা পাটকাঠির বেড়ার ভাজে লুকিয়ে থাকে। শোষণকৃত রক্ত শেষ হলে কয়েক দিনের মধ্যেই আবার গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদির গায়ে উঠে আবার রক্ত চোষা শুরু করে। এসময় এরা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা দেয় যাকে বলে নিম্প। এখানে উল্লেখ্য যে, একটি স্ত্রী আঠালী প্রায় ১০০০ ডিম দিয়ে মারা যায়।
দমন ব্যবস্থা: কওমাফস (এসানল), ডায়াজিনন (নিওসিডল) নামক কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত পশুর শরীর ধুয়ে দিতে হবে। আবার আইভার মেকটিন (আইভোমেক) ইনজেকশন চামড়ার নিচে ১ সি.সি প্রতি ৫০ কেজি ওজনের জন্য পুশ করতে হবে এবং ১৫ দিন পর একই মাত্রায় আবার দিতে হবে। অন্যান্য দেশে প্রতিষেধক টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা হলেও আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। তবে কাক, বক, শালিকসহ বিভিন্ন পাখি আঠালীকে খেয়ে কিছুটা দমন করে থাকে।
কৃপ্র/এম ইসলাম