‘হুমকির মুখে উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষ’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ একসময় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর ও কুয়াকাটার গঙ্গামতি সমুদ্র সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল সুদীর্ঘ বনাঞ্চল। সত্তুরের দশকের ভয়াবহ বন্যা, এবং ২০০৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সিডর, আইলা, মহাসেনসহ একাধিক প্রাকৃতি দূর্যোগ পাল্টে দিয়েছে উপকূলের চিত্র। এছাড়াও বনদস্যুদের ক্রমাগত উৎপাতে ধংস হচ্ছে উপকূলের বনাঞ্চল। এ দূর্যোগ থেকে প্রাকৃতিক দেয়াল স্থানীয়দের জীবন বাঁচালেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ প্রাকৃতিক দেয়াল এখন সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে হুমকির মুখে উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষ।
পটুয়াখালীর বন বিভাগের আওতায় দেড় লাখ একর জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে। এরমধ্য দেড় দশকে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ৩ হাজার ৫শ একর জমির বনাঞ্চল ধংস হয়েছে। সমতালে বনদস্যুদের উৎপাতেও ধংস হয়েছে এ অঞ্চলের বনাঞ্চল। সাগরের পানিতে অতিরিক্ত লবনাক্ততা বৃদ্ধির সাথে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই লন্ড-ভন্ড করে দিচ্ছে রাঙ্গাবালীর সোনারচর সৈকত ও কুয়াকাটা গঙ্গামতি সৈকতের মনোমুগ্ধকর সবুজ বনায়ন। মরে যাচ্ছে গেওয়া, কেওড়া, ছইলাও নারিকেল গাছগুলো। সোনার চরের সেই সরু পথের দুই পেশের ঝাউগাছ আর কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের ঝাউবন , শালবন পুরোন পর্যটকদের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি।
২০০৪ সালে বঙ্গোপসাগর তীর ঘেষে বিশ হাজার ছাব্বিশ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে জেগে ওঠে সোনার চর। সেখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির পাশাপাশি সাত কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটার ন্যায় সোনার চরের সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়েও সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এপর দিকে ষাটের দশকে বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের বাইরে গঙ্গামতি, কুয়াকাটার সৈকত লাগোয়া বালুচরে ম্যানগ্রোভ জাতের বৃক্ষের বনায়ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গেওয়া, কেওড়া, ছইলা গাছ। ওই সময় ১১শ একর ভূমিতে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান করা হয়েছিল। বন বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি সৈকত এলাকার প্রায় ২০ হাজার গেওয়া, কেওড়া ও ছইলা গাছ বর্তমানে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ন কবীর বলেন, বৈষ্ণিক উষ্ণতার কারনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে বরফ গলে যাওয়ার কারনে সাগর নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। সেই সাথে পানিতে লবনাক্ততার পরিমান বেড়ে যাওয়ায় ৫০/৬০ বছর পূর্বে সৃষ্টি প্রকৃতিক বনাঞ্চল ও বন বিভাগের লাগানো বনাঞ্চল বিপরীত প্রতিকূলতায় এখন মরে যাচ্ছে। তারমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে এখন সাগরের পানির স্তর ক্রমশই বাড়ছে। এ কারনে বেশি করে গাছ লাগালে প্রাকৃতিক এ দূর্যোগ থেকে উপকূলের মানুষ রক্ষা পেতে পারে।
কৃপ্র/এম ইসলাম