কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরীর আবর্জনা সম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যে দুটি ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে। এ দুটি প্ল্যান্টের মাধ্যমে নগরীর সব বর্জ্যকে সারে রূপান্তরিত করা হবে। ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাষ্ট ফান্ডের অধীনে প্রায় পাঁচশত কোটি টাকা ব্যয়ে এ সার কারখানা দুটি স্থাপন করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নেয়া এই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট ফোকাস প্রোজেক্টটি মূলত ‘ থ্রি আর’(রিডিউস, রিইউজ এবং রিসাইকেল) নামে পরিচিত। ক্লাইমেট চেঞ্জ ফান্ডের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। থ্রি আর প্রজেক্টের পরিচালক রাহিদ হোসাইন বলেন, দু’টি সার কারখানা স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে আমরা দুটি জায়গা নির্ধারণ করেছি। একটি নগরীর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মাতুয়াইলে এবং অন্যটি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আমিনবাজার এলাকায়। জায়গা দুটির সয়েল টেস্টও সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রতিটি কারখানা দৈনিক ২০ টন সার উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিগগিরই কারখানা দুটি স্থাপনের জন্য আমরা টেন্ডার আহ্বান করব। আশা করছি আগামী বছরের শুরুর দিকেই আমরা আবর্জনা থেকে সার উৎপাদনে যেতে পারব। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটি হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হবে। প্রথমে এই প্রকল্পটি আমরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু করছি। এখানে সফল হলে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে পরবর্তীতে এই কার্যক্রম সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এই থ্রি আর প্রজেক্টের অধীনে চারটি বর্জ্য স্থানান্তর স্টেশন স্থাপন করবে যার দুটি স্থাপিত হবে নগরীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এবং অন্য দুটি স্থাপিত হবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের ৬৪টি জেলায় বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের লক্ষ্যে আরো একটি প্রকল্প ‘ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম)’ বাস্তবায়ন করছে। আর এই প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়নগঞ্জ এবং কক্সবাজার জেলায় সার কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।
ওয়েস্ট কনসার্ন-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল পরামর্শক মাকসুদ সিনহা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সারা দেশে সার কারখানা স্থাপন করা যেখানে মূলত বর্জ্য ব্যবহার করে সার উৎপাদন করা হবে। এতে করে আমাদের কৃষি কাজে সারের চাহিদা শতভাগ পূরণ হবে। দেশে উৎপাদিত বর্জ্যরে প্রায় ৭০ ভাগেরও বেশী জৈব বর্জ্য উল্লেখ করে সিনহা বলেন, বর্জ্য ব্যবহার করে সার উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আর এতে করে বাংলাদেশ যেমন, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে তেমনি পরিবেশগত দিক থেকেও লাভবান হবে।
তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টরকেও সরকার উৎসাহ দিতে পারে বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক সহযোগিতা যেমন, লীজ ভিত্তিতে জমি দিয়ে যাতে করে তারাও স্বল্প খরচে সার কারখানা স্থাপন করতে পারে। তাছাড়া যদি বাণিজ্যিক ভাবে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটিকে লাভজনক করা না যায় তবে উদ্যোক্তোরা কখনোই এই ব্যবসার সাথে জড়িত হবেন না । তিনি বলেন, মেগা সিটি ঢাকাতে দৈনিক প্রায় ৪৫০০ টনেরও বেশি বর্জ্য তৈরী হয়। এসব বর্জ্যকে একটি সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
সিনহা বলেন, আমেরিকা, ইউরোপ অথবা জাপানের দিকে তাকালে দেখতে পাই তাদের তুলনায় আমাদের বর্জ্য উৎপাদন অনেক কম। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে জনপ্রতি প্রায় তিন কেজি বর্জ্য উৎপাদন করছে সেখানে আমাদের মাথা পিছু বর্জ্য উৎপাদন মাত্র ০.৫ কেজি। কিন্তু তারা তাদের উৎপাদিত এসব বর্জ্যকে সঠিক উপায়ে পুনঃউৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছে যা আমরা পারছি না। এছাড়াও, সিনহা বলেন, পরিবশে অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন, সিটি কর্পোরেশনকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে রিসাইক্লিংয়ের উদ্দেশ্যে সংগৃহীত এসব বর্জ্য প্রাথমকি পর্যায়ে পৃথক করা হয়।
তিনি বলেন, এজন্য দরকার প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরী করা যাতে করে সাধারণ মানুষ জৈব এবং অজৈব বর্জ্য বিষয়ে ধারনা লাভ করতে পারে। যদি সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায় যে এতে তারা লাভবান হবেন তবে তারা নিজেরাই প্রাথমিকভাবে বর্জ্য পৃথকীকরণের কাজটি করবেন। পরিবশে অধিদপ্তর দু’বছর আগে নগরীতে প্রায় ১.৮ লাখ ডাস্টবিন বিতরণ করে যাতে করে সাধারণ মানুষ জৈব এবং অজৈব বর্জ্য নিজেরাই পৃথক করতে পারেন।
সুত্র, বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম