কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত তিন অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য (চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ) রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়। পরের দুই অর্থবছরে সেটি কমে যথাক্রমে ৫৬ ও ৫৩ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পরিস্থিতি আরও নাজুক, রপ্তানি হয়েছে ৪৭ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, হিমায়িত খাদ্য রপ্তানির বড় অংশই চিংড়ি। প্রায় পৌনে তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ির চাষাবাদ হয়। বার্ষিক উৎপাদন ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াকরণের জন্য সারা দেশে ৭০টি কারখানা আছে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে হিমায়িত খাদ্য ৬০টি দেশে রপ্তানি হয়। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৪৪ হাজার টন চিংড়ি ও ১০ হাজার টন হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৪০ হাজার টন চিংড়ি ও ১১ হাজার টন হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়েছিল।
কয়েকজন হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারক জানান, হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ার মূল কারণ চিংড়ির উৎপাদন হ্রাস। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরে সরকার ইলিশ মাছ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সামগ্রিকভাবে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমে গেছে।
বিএফএফইএ ১৩ জুন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন করা দরকার। এ ছাড়া বাড়তি ফলনের জন্য বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে ভেন্নামী জাতের চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এই জাতের চিংড়ি চাষ করে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এগিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএফএফইএর সভাপতি আমিন উল্লাহ বলেন, চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মা চিংড়ির ভূমিকা অনেক। তবে বছরের প্রায় তিন মাস সমুদ্রে মা চিংড়ি আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হ্যাচারিগুলো মা চিংড়ি পাচ্ছে না। তেমনি চাষিদের কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী চিংড়ির পোনা পৌঁছায় না। তাই উৎপাদন কমে গেছে। সে জন্য সমুদ্রে চিংড়ি আহরণের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা হ্রাস করা দরকার। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি করা চিংড়ির চালান বিভিন্ন কারণে ফেরত আসে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন নিয়মকানুনের কারণে সেসব চালান ছাড় করানো কষ্টসাধ্য। ফলে অনেক সময় ফেরত আসা চিংড়ি পুনঃ রপ্তানি করা সম্ভব হয় না।
চিংড়ি উৎপাদন বাড়াতে হলে বর্তমানে ভেন্নামী জাতের চিংড়ি চাষ ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিএফএফইএর সহসভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন। গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক পাউন্ড গলদা বা বাগদা চিংড়ি যেখানে ৭ ডলারে রপ্তানি করি, সেখানে ভারতসহ অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ করে মাত্র ৫ ডলারে। বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকায় যেহেতু মন্দা ভাব চলছে, সে জন্য বিদেশি ক্রেতারা কম দামের চিংড়ি কিনতেই বেশি উৎসাহ দেখায়।’
কাজী বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে ভেন্নামী চিংড়ি চাষের অনুমতি চাইছি। তবে এই জাত চাষ করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন অজুহাতে মৎস্য অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এখানে আমাদের প্রশ্ন, ভারতের মতো পার্শ্ববর্তী দেশে যেখানে ব্যাপক হারে ভেন্নামী চাষ হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে করতে সমস্যা কী?’
সুত্র, প্রথম আলো / কৃপ্র/এম ইসলাম