কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায় গোড়াই শিল্পাঞ্চলের শতাধিক মিল-কারখানার দূষিত বর্জ্য নদী, পুকুর ও খাল-বিলের পানিতে মিশে পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। অধিকাংশ মিল-কারখানায় বর্জ্য শোধনাগারের জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ব্যবস্থা না থাকায় দূষিত বর্জ্য নদী ও খাল-বিলের পানিতে পড়ে পানি দূষিত হয়ে মাছ মরে যাচ্ছে। সেইসাথে পচা পানির দুর্গন্ধে চারপাশ ছড়িয়ে পড়ায় এলাকার গাছ-পালাও মরে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
গোড়াই শিল্পাঞ্চলের ১৫/২০টি গ্রামের তিন/চার লাখ মানুষের বসবাস করা মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সেইসঙ্গে মানুষের শরীরে খোস-পাচড়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের চারপাশের খাল-বিল ও নদী-নালায় পচা বর্জ্য পড়ে পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই এলাকা একটি শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা। ১৯৬২ সালে এখানে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প টাঙ্গাইল কটন মিলস নামে একটি সুতা উত্পাদনের কারখানা স্থাপন হয়েছিল। এলাকাটি পাহাড়ি হওয়ায় দিন দিন এখানে শিল্প-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে এই এলাকায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মিল-কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানার মধ্যে রয়েছে কাশেম ড্রাইসেল, বেঙ্গল এনএফকে, নাসির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, মণ্ডল গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, ইয়ুত্ স্পিনিং মিলস, উত্তরা সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ সাউথ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, হানিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, উত্তরা স্পিনিং মিলস, নাহিদ কটন মিলস, মাসাফি ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি, নিউট্রেক্স গ্রুপ, নিউএইজ, খান গার্মেন্টন্স, কম্পফিট কম্পোজিটসহ শতাধিক মিল-কারখানা। এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুই একটি প্রতিষ্ঠানে বর্জ্য শোধনাগারের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন হলেও অধিকাংশ মিল-কারখানায় বর্জ্য শোধনাগারের জন্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন হয়নি।
ঐসব কারখানার মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য বিভিন্ন নদী ও খাল-বিলের পানিতে নালা কেটে বিশেষভাবে ফেলে দিচ্ছে। আর এই সব বর্জ্য পানিতে মিশে বিষাক্ত হয়ে মাছ মরে যাচ্ছে। সেইসাথে পচা দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন গাছপালাও মরে যাচ্ছে। গোড়াই শিল্পাঞ্চলের সোহাগপাড়া, গন্ধব্যপাড়া, নাজিরপাড়া, হাটুভাঙ্গা, সৈয়দপুর, ক্যাডেট কলেজসহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। বিশেষ করে সোহাগপাড়া, খাল, ক্যাডেট কলেজ এলাকার খাল ও বিল, দক্ষিণে লৌহজং নদী, উত্তরে বংশাই নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পানি পচে যাওয়ায় বিভিন্ন ফসল এবং সবজি আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।
ব্যবসায়ী আশরাফ সিকদার, বাবুল সিকদার, ক্যাডেট কলেজ এলাকার চাকরিজীবী শামীম হোসেন, প্রভাষক নুরুল ইসলামসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, সরকারিভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন দিন এলাকার পরিবেশ আরো বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।
টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য গোড়াই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানায় মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালিত হয়। ইতোপূর্বে কয়েকটি কারখানায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগে অন্তত ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য বিভিন্ন কল-কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান শুরু করেছেন। তাদের এ অভিযান চলমান থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সুত্র, ইত্তেফাক / কৃপ্র/এম ইসলাম