কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ছয় শতাধিক গৃহবধূ এলাকার কৃষির চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। নিজেদের তৈরি কম্পোস্ট সার দিয়ে নিজেরাই সবজির চাষ শুরু করেছেন এই নারীরা। তাতে শুধু অরগানিক বা বিষমুক্ত সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাটির ২৪টি গ্রাম থেকে বিদায় নিয়েছে অভাব-অনটন। এখানকার সবজি এলাকা ছাড়িয়ে রাজধানীতেও পাড়ি জমাচ্ছে। এই গৃহবধূদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ইউনিয়নের ১৩ জন নারী বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ‘জয়ীতা’ নির্বাচিত হয়েছেন। একজন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক।
শুরুতে কৃষিকাজে স্বামীদের সহায়তা করতে বাড়ির আঙিনায় সবজির চাষ শুরু করেছিলেন এই গৃহবধূরা। তারপর ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত জমি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফসলি জমিতেও এই চাষ ছড়িয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই নারীদের জন্যই এখন এলাকার লোকজন বিষমুক্ত সবজি খেতে পারছেন।
নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ২৪টি গ্রাম বরাবরই ছিল দারিদ্র্যপীড়িত। ২০০৫ সালে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ড নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে নারীরা নেমে পড়েন বিষমুক্ত সবজির চাষে। উদ্দেশ্য ছিল সংসারে বাড়তি কিছু আয়। কৃষিবিজ্ঞানী গুল হোসেন ২০০২ সালে এই ইউনিয়নের বেশ কিছু নারীকে কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। পরে সাংগঠনিক পর্যায়ে কাজ করার সময় এই প্রশিক্ষণ সহায়ক হয়েছে। নারীরা সার তৈরির পাশাপাশি নিজেরাই কৃষিকাজে নেমে পড়েন।
একাধিক নারী বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ড ২০০৫ সাল থেকে তাঁদের নিয়ে কাজ শুরু করলেও বিষমুক্ত সবজির চাষ শুরু হয় ২০১১ সালে। বাড়ির আঙিনায় কীভাবে এই সবজির চাষ করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে থাকেন। নারীরা একত্র হয়ে ভার্মি কম্পোস্ট ও বালাইনাশক তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা, পার্শ্ববর্তী খেত ও অনাবাদি জমি চাষযোগ্য করে বিষমুক্ত সবজির চাষ করতে থাকেন। নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বাড়িতে বাড়িতে এখন এই তৎপরতা চোখে পড়ে। স্থানীয়ভাবে বিক্রি ছাড়াও সপ্তাহে দুই দিন তাঁরা দুই ট্রাক সবজি জেলার বাইরে পাঠাচ্ছেন।
হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ডের কর্মসূচি কর্মকর্তা এস এম শাহিন হোসেন বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী করতে তাঁরা নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। তারই একটা ছিল বিষমুক্ত সবজির চাষ। আর এই চাষ করতে বাড়িতে কেঁচো সার ও বালাইনাশক তৈরি করা।
মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের মর্জিনা খাতুনের দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বাবা ওমর আলীর বাড়িতেই থাকেন। তিনি জানান, একসময় খুবই অভাবের সংসার ছিল তাঁদের। ২০০২ সালের পর পুরুষের পাশাপাশি তাঁরা নারীরা কৃষিকাজে এগিয়ে আসেন। ২০১১ সাল থেকে তাঁরা বাড়ির আঙিনায় সবজির চাষ করছেন। বর্তমানে তাঁর বাড়িতে প্রায় ৭০০ চৌবাচ্চায় কেঁচো সার তৈরি হয়। মাসে চার টন সার বিক্রি করছেন তিনি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এই সার বিক্রি করে তাঁর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। ২০১৭ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন।
সুত্র, প্রথম আলো / কৃপ্র/এম ইসলাম