কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ময়মনসিংহের কৃষকদের অন্যতম অর্থকরী কৃষিপণ্য হয়ে উঠেছে ধানের খড়কুটো । দেশে গরুর খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে এসব খড়। বিশেষ করে কোরবানি ঈদ লক্ষ্য করে অনেক মৌসুমি খামারি গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করেছেন। ফলে সারা বছর খড়ের চাহিদা থাকলেও এ সময়টায় চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ। ফলে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামে। এমনকি ওজন হিসেবে ধানের প্রায় দ্বিগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে খড়কুটো।
ময়মনসিংহের কৃষিপ্রধান ১৩টি উপজেলাতেই কম-বেশি খড় বিক্রি হলেও এ ব্যবসাটি সবচেয়ে জমজমাট হালুয়াঘাট উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১২টি ইউনিয়নে। এ এলাকায় প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার খড় বেচাকেনা হয়। তবে এবারের বিষয়টা একটু ভিন্ন। গত বোরো মৌসুমে বিআর ২৮ ধানে নেক ব্ল্যাস্টের কারণে বহু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন সে ক্ষতি তারা পুষিয়ে নিচ্ছেন খড় বিক্রি করে।
কৃষক ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হালুয়াঘাটে প্রতি বিঘা জমির খড় বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। অনেকে আরো বেশি দামেও বিক্রি করছেন। ব্ল্যাস্ট আক্রান্ত জমি থেকে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ) ১০ মণের বেশি কেউ ধান পাননি। খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। অথচ ধানের দাম এখন সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা মণ। ধানে লোকসান হলে যথেষ্ট খড় পেয়েছেন কৃষকরা। সে খড় যত্ন করে শুকিয়ে রেখেছেন। এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও খামারিরা আসছেন হালুয়াঘাট উপজেলার গ্রামগুলোতে। এক একর জমির খড় বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।
কৃষকরা জানান অতিবর্ষণ ও বন্যার কারণে অনেকের ধানের পাশাপাশি খড়ও নষ্ট হয়েছে। সেসঙ্গে গো-খাদ্য খুদ, কুঁড়া, ভুসি ও চিটাগুড়সহ অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন খামারিরা। ফলে খড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর হালুয়াঘাটের কৃষকরা বোরোর ফলন ও দাম দুই-ই কম পাওয়ায় খড় খুব যত্ন করে রেখেছেন। এখন ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
হালুয়াঘাট উপজেলার বড়দাসপাড়া কুমুরিয়া, গাজিরভিটা বাঘাইতলাসহ ধারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে খড় কেনেন ব্যবসায়ী আলাল উদ্দিন। দৈনিক ২৫-৩০ হাজার টাকার খড় বেচাকেনা করেন বলে জানান তিনি। এ ব্যবসায় প্রতি মাসে খরচ বাদে ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুলতান আহমেদ বলেন, এ উপজেলায় ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। শিলাবৃষ্টি ও অতিবর্ষণ, বন্যা এবং নেক ব্ল্যাস্টের কারণে প্রায় তিন হাজার হেক্টর ধানের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকার খামারি ও পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে খড় কিনে নিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম