কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
পরীক্ষামূলক আবাদে খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছে। গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত এ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ৫.৭০ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে।
এ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ৩.৮৪ মে. টন থেকে ৫ মে. টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম বলে বিনা জানিয়েছে। কিন্তু গোপালগঞ্জে প্রত্যাশার চেয়েও .৭০ মেট্রিক বেশি ফলন দিয়েছে এ জাতের ধান। মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সূচীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুবল কীর্ত্তনীয়ার জমিতে উৎপাদিত বিনা ১৯ জাতের ধান কেটে পরিমাপ করে মাঠ দিবস থেকে বিনার বিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
এ জাতের ধান চাষে সেচ খুব কম লাগে। সার ও কীটনাশক সাশ্রয় হয়। খরা সহিষ্ণু স্বল্প জীবন কালের এ ধান পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলা করে বাম্পার ফলন দিয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি আউশ মৌসুমে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ১০ একর জমিতে ৩০টি প্রদর্শনী প্লটে প্রথমবারের মতো এ ধানের আবাদ করে কৃষক। প্রথমবার আবাদ করেই ২ জেলার কৃষক বাজিমাত করেছেন।
সূচীডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুবল কীর্ত্তনীয়া বলেন, বিনা উপকেন্দ্র আমাকে বীজ, সার, কীটনাশক বিনামূল্যে দিয়েছে। তাদের পরামর্শে এ জাতের ধান চাষে সেচ সহ অন্যান্য খরচ খুবই কম লাগেছে। গাছ হেলে পড়ে না। প্রচলিত আউশ ধানের তুলনায় এ ধান অনেকগুণ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের ধান সরু। তাই বাজারে বেশি দাম পেয়ে আমি আরও বেশি লাভবান হব বলে আশা করছি।
কৃষক সমর কীর্ত্তনীয়া বলেন, ধানের উৎপাদন দেখে আমার প্রাণভরে গেছে। আমি আগামীতে সুবলের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে এ ধানের চাষাবাদ করব। আমাদের এলাকায় লাভজনক এ ধানের চাষ সম্প্রসারিত হবে।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেফাউর রহমান বলেন, আগামীতে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলাবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকবিলা করা। সেজন্য আমাদের বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করছেন। এসব জাত কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে তাদের পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উপযোগী করে তুলছি। এরই অংশ হিসেবে খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ আবাদ করে কৃষক প্রত্যাশা ছাপিয়ে ফলন পেয়েছে। আমি এ জাতের ধান বীজ বিএডিসিকে উৎপাদন করে কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে অনুরোধ করছি।
বিনা ধান ১৯ এর উদ্ভাবক কৃষি বিজ্ঞানী ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধান চষে পানির অবচয় রোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। তাই কম সেচে আউশ মৌসুমের এ ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করতে হবে। আমাদের উদ্ভাবিত খরা সহিষ্ণু স্বল্প জীবন কালের এ ধান পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলা করে কৃষককে বাম্পার ফলন দিতে সক্ষম।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত পরিচালক কিংকর চন্দ্র দাস বলেন, বোরো মৌসুমে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে পানির অবচয় হয়। ফলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আশার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষা ও জলাবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি সাশ্রয়ী আউশ ও আমন মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ সম্প্রসারিত করতে সরকার কৃষককে উদ্ধুদ্ধ করছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম