কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সনাতন কৃষির যান্ত্রিকীকরণের কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।
আতিউর রহমান বলেন, দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরর্শীল। অথচ নির্ভরর্শীল এ কৃষি খাতের আওতা দিনদিন কমে আসছে। প্রতিবছর চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে কমছে। এভাবে ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখ হেক্টর জমিতে গ্রামীণ ও নাগরিক স্থাপনা বসানো হয়েছে। যা সত্যিই আমাদের জন্য, কৃষির জন্য অশনি সংকেত। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এসডিজি অর্জন অসম্ভব হয়ে উঠবে।
এসডিজি অর্জন করতে হলে আমাদের একর প্রতি ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ হারে বাড়াতে হবে। যা চাষযোগ্য জমি কমে আসলে হবে না। তাই আমাদের চাষ যোগ্য জমি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাতে উৎপাদন বাড়বে, কৃষকের উৎপাদন খরচও কমবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।
এছাড়া তিনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতে ব্যাংক রেট ৫ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে মোট সরবরাহকৃত ঋণের অন্তত ১০ শতাংশ মৎস চাষে দিতে হবে। সর্বশেষ মসলা চাষি ও গাভী খামারিদের জন্য যেমন স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয়েছিল তেমনটি কৃষির যান্ত্রিকীকরণেও প্রস্তাব দেন তিনি। মেটাল গ্রুপ আয়োজিত ‘এগ্রি ম্যাশিনাইজেশন: দি রোল অব প্রাইভেট সেক্টর এন্ড এক্সেস টু ফাইন্যান্স’ শীর্ষক এ সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মেটাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামাল, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল আওয়াল, অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক হান্নানা বেগম প্রমুখ।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের কৃষি খাতের জন্য আলাদা একটি কৃষি শিল্পনীতি দরকার। যে নীতির মাধ্যমে এ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে দিক নির্দেশনা থাকবে। দেশের পরিস্থিতিতে সময় এসেছে কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগানো। এ খাতে অর্থবরাদ্দ বাড়ানো। কৃষি ও কৃষকের অর্থ সহায়তায় সরকারের দেড়শ’ কোটি টাকার একটি ফান্ড আছে। কৃষকের প্রয়োজনে সে ফান্ড হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া উচিত। এ ফান্ডের টাকা কৃষক পর্যাযে পৌঁছাতে ব্যাংক ও গ্রামীণ এনজিওগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় সাধন করে আগানো যেতে পারে।
মেটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামাল বলেন, কৃষি নির্ভর এই দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের কোন বিকল্প নেই। সরকারি ও বেসরকারি খাতের পাশাপাশি দেশের আর্থিক সেবা খাতেরও কৃষির যান্ত্রিকীকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা এবং সরকারের অনুদানের বা ভর্তুকি দেয়ার ক্ষমতা সীমিত। তবে ব্যাংক বা অন্য আর্থিক সেবাদানকারীদের পক্ষে একটি বাজার নির্ভর পদ্ধতিতে কৃষির যান্তিকীকরণে ভূমিকা রাখা সম্ভব। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে আমাদের এটা করা উচিত।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমিরেটাস ড. আবদুস সাত্তার মন্ডলসহ বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ দেশি ও বিদেশি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের এবং বাংলাদেশে কর্মরত কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
কৃপ্র/এম ইসলাম