কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
কুড়িগ্রাম সদরের কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে থাই পেয়ারার চাষ শুরু হয়েছে । আকারে বড় ও সুস্বাদু হবার পাশাপাশি বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও সারা বছরে উৎপাদন হবার কারণে থাই পেয়ারা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে ।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কুড়িগ্রামের মাটি থাই পেয়ারার চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষে প্রসার ঘটছে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলটির। আর কম খরচে বেশী লাভ হওয়ায় পেয়ারা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে কৃষক।
কৃষক ও কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, থাই পেয়ারার উৎপাদন হয় মুলত রাজশাহী, নাটোর ও বরিশালসহ কয়েকটি এলাকায়। গত দু’বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে এই পেয়ারার চাষ শুরু হয়েছে কুড়িগ্রামের কয়েকটি এলাকায়। চারা লাগানোর এক বছরের মাথায় ফল আসছে গাছে। এক-একটি পেয়ারার ওজন আধা কেজি পর্যন্ত হয়।
প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ২৫ মে. টন। পোকার আক্রমণ টেকাতে এবং গুণগত মান ধরে রাখার জন্য ব্যাগিং পদ্ধতিতে পেয়ারার চাষ করা হচ্ছে। অল্প খরচে পেয়ারার চাষ করে লাভবান হচ্ছে এখানকার চাষীরা। উৎপাদিত পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি কলম চারা বিক্রি করে বাড়তি আয় হচ্ছে চাষীদের।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, রংপুর হর্টি কালচার নার্সারী থেকে গত বছর তিনি চারা কিনে ৭০ শতক জমিতে থাই-৭ জাতের পেয়ারার চাষ শুরু করেন। ৪ শতাধিক গাছের অধিকাংশে ছয় মাসের মধ্যে পেয়ারা ধরতে শুরু করে। বছরান্তে সব গাছেই পেয়ারা ধরে। এক একটি গাছে ১০-২০ কেজি পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে। এ বছর তিনি দেড় লাখ টাকার উপর পেয়ারা বিক্রি করেছেন। অথচ খরচ পড়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা।
স্থানীয় বাজারে তিনি এই পেয়ারা বিক্রি করেছেন। তবে দেশের অন্যান্য জেলা বিশেষ করে ঢাকা, রংপুর ও চট্রগামে এই পেয়ারা বাজারজাত করার সুযোগ রয়েছে। মৌসুমে প্রতি মণ পেয়ারা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ও মৌসুম বাদে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
তিনি আরো জানান, তাঁর বাগানে প্রায় এক হাজার কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতিটি চারা ৩০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে পেয়ারার পাশাপাশি চারা বিক্রি করে অনেক টাকা মুনাফা লাভ করা সম্ভব হবে।
আব্দুল লতিফের পাশাপাশি শিবরাম গ্রামের নুরুল ইসলাম ২৫ শতক, পরিমল চন্দ্র ১০ শতক, দাশেরহাটের এমদাদুল হক ৫৩ শতক জমিতে থাই পেয়ারা চাষ করেছেন। এরকম অনেক কৃষকই ঝুঁকে পড়ছে পেয়ারার চাষের দিকে। এমনকি জমির আইলে পরিবেশ বিনাশী ইউকিলিট্যাস গাছ অপসারণ করে পেয়ারা চাষ করছেন কেউ কেউ।
এদের একজন সদর উপজেলার গয়ারী গ্রামের রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি পুষ্টি ও অর্থ আসায় তিনি পেয়ারার চারা লাগিয়েছেন জমির আইলে।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি থাই পেয়ারার চাষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। এই পেয়ারার চাষে তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে রোদে ঝলসে যাওয়া কিংবা পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যাগিং পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে চাষীদের। এতে পেয়ারা গাছে ধরার পর পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে পুরো পেয়ারা ঢেকে দেয়া হয়। ফলে উৎপাদিত পেয়ারার গুণগত মান ভালো থাকে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামের আবহাওয়া ও মাটি থাই পেয়ারা চাষের জন্য উপযোগী। তাই এই অঞ্চলে থাই পেয়ারা চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বন্যার সময়ও এই গাছের কোন ক্ষতি হয় না। তাই বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে পেয়ারা চাষের।
তথ্য সুত্র , বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম