কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
বরগুনা জেলার বিভিন্ন বাজারে কম দরে গলদা ও বাগদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন ঘেরে চাষ করা বা পায়রা, বিষখালি নদীর গলদা ও বাগদা চিংড়ি ছোট-বড় সব বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে। তথ্য সুত্র বাসস বাংলা।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় গলদা ও বাগদা চিংড়ির দর অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে অন্যান্য ছোট সাইজের হরিণা, চামা, গোদা, কাঁঠালি চিংড়ির দর তুলনামূলকভাবে খুবই বেশি। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে গলদা বা বাগদা চিংড়ি সাইজ ভেদে ৫ শ’ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৭ শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ছোট সাইজের চিংড়িগুলোর দর চলছে গড়ে কেজি প্রতি ৫ শ টাকা।
স্থানীয় বাজারগুলোতে গলদা ও বাগদার প্রাচুর্য ও কম দরে সম্পর্কে বিভিন্ন আড়ত মালিকরা জানিয়েছেন, নানা কারণে দেশের দ্বিতীয় রফতানিকারক পণ্য চিংড়ি রফতানিতে এসেছে স্থবিরতা। ক্রমান্বয়ে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ির রফতানি নি¤œমুখী।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’র তথ্য সূত্র মতে, দেশে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ক্রমান্বয়ে চিংড়ির রফতানি নি¤œমুখী। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে চিংড়ি রফতানি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
২০১৮ সালের তিন মাসে (মার্চ, এপ্রিল, মে) ৪ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি হয় যার বাজার মূল্য ৫৮ হাজার ৮৯৬ মার্কিন ডলার। তার আগের বছরে (২০১৭) একই সময়ে রফতানি হয় ৭ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন যার বাজার মূল্য ছিলো ৮৬ হাজার ৬১৩ মার্কিন ডলার।
বিশ্বব্যাপী এক প্রকার হাইব্রিড ভেনামি চিংড়ির বাজার দখলের কারণে দেশের প্রাকৃতিক চিংড়ি রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে লাখো মানুষ।
বরগুনা সদর উপজেলার হ্যাচারি মালিক জাকির হোসেন মিরাজ জানিয়েছেন, বিশ্ব বাজার আবারও বাংলাদেশের দখলে আনতে বাগদার পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ি চাষের প্রয়োজন। ভেনামি চিংড়ি চাষে খরচ ও দাম কম আর উৎপাদন বেশি হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। বাংলাদেশে এই চিংড়ি চাষের অনুমোদন নেই। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে এর চাষ হচ্ছে। ৯০ দশক থেকে প্যাসিফিক সাদা চিংড়ি বা ভেনামী চিংড়ির বাজার বড় হতে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে এ চিংড়ি চাষ হয়। বিশ্বে রফতানির ৭৭ শতাংশ অবদান ভেনামির যেগুলো ৭২ শতাংশ এশিয়ায় উৎপাদন। গলদা ও বাগদার অবদান ১২ শতাংশ।
অবসরপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা ও মৎস্য গবেষক প্রফুল্ল কুমার সরকারের মতে, ভেনামি চিংড়ি চাষ করলে গলদা ও বাগদা হারিয়ে যাবে এমনটি ভাবা হতো। তবে এটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। যেহেতু এ চিংড়ির উৎপাদন বেশি, বিশ্বে চাহিদা বেশি তাই করপোরেট হাউজকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এটার চাষ নিয়ে ভাবতে হবে। এতে আমাদের রফতানি বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।
বরগুনার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন ঘের থেকে বরগুনার বাজারে প্রচুর পরিমাণ চিংড়ি আসে। অভিযোগ রয়েছে, ওই চিংড়ি মাছে কৌশলে জেলি পুশ করা হচ্ছে ওজন বাড়ানোর জন্য। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে মৎস্য বিভাগ সতর্ক রয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম