কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
চলতি মাসে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ৬ হাজার ৩৮৪ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে পানি নামতে শুরু করলেও এসব জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পানি দ্রুত নেমে গেলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম। তথ্যসুত্র – দৈনিক বনিক বার্তা।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এ অঞ্চলের দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এতে দুই জেলার ৬ হাজার ৩৮৪ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করা হয়েছিল। বাকি জমিতে ডাল, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ করা হয়েছিল। গাইবান্ধায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা এবং ফুলছড়ি উপজেলা। এসব উপজেলায় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়া ফসলি জমির পরিমাণ ১ হাজার ৭৬৮ হেক্টর। কুড়িগ্রাম উপজেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর, উলিপুর, চিলমারী, রাজীবপুর, রৌমারী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন, পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় তার ৬০ শতক জমির আমন ধানের গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একই ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার কৃষক জীবন ব্যাপারী বলেন, এখনো আমার প্রায় এক একর জমির ধান ও সবজি পানিতে নিমজ্জিত আছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পানিতে নিমজ্জিত সব ফসল নষ্ট হবে না। তবে এটা নির্ভর করে পানি সরে যাওয়ার ওপর। এরই মধ্যে পানি নামতে শুরু করেছে। যে জমির পানি দ্রুত সরে যাবে, সে জমির ফসল তত বেশি ভালো থাকবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হলে সে জমিতে কৃষকদের ডাল জাতীয় ফসল আবাদ করতে বলা হচ্ছে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে কৃষি বিভাগের লোকজন নিয়মিত বিভিন্ন এলাকার খোঁজখবর রাখছেন। আমি নিজেও গত বুধবার ধরলা নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার চর সবুজ পাড়া ও দুধকুমার নদী সংলগ্ন ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর কাইম বড়াইবাড়ী এলাকা পরিদর্শন করেছি।
তিনি বলেন, পানি যে হারে সরে যাচ্ছে, তাতে আশা করা যায় সব ফসল নষ্ট হবে না। তবে পানিতে নিমজ্জিত থাকার পর জেগে ওঠা গাছের জন্য খুব গরম আবহাওয়া ক্ষতিকর। তাই ওই সময় অল্প বৃষ্টি অথবা ঠাণ্ডা আবহাওয়া খুবই উপকারী।
তিনি আরো জানান, নদ-নদী সংলগ্ন জমির ফসলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের ডাল জাতীয় শস্য এবং খরিপ মৌসুমের শাকসবজি আবাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রোপা আমনের জমি সবচেয়ে বেশি নিমজ্জিত হলেও রংপুর অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমস্যা হবে না। ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ অঞ্চলে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ ও ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৩ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আছে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ হাজার ৪৫ হেক্টর বেশি জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম