কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
বিনা-১৭ জাতের ধানটি বদলে দিচ্ছে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কৃষিচিত্র। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্বল্প জীবত্কালের এ ধানের কারণে এখন এক বা দুই ফসলি জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। ধানের এ জাত কুড়িগ্রামের সবক’টি উপজেলায় ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ। তথ্যসুত্র- দৈনিক বনিক বার্তা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, ‘বিলুপ্ত ছিটমহল উন্নয়ন কর্মসূচি’র আওতায় এবারই প্রথম দাসিয়ারছড়ায় চারটি প্রদর্শনী প্লট করে বিনা-১৭ ধান চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ীতেও আটজন কৃষককে দিয়ে আটটি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় ১০০ একর জমিতে বিনা-১৭ ধান চাষ করা হয়েছে। আমন কাটা শুরু না হলেও এ কৃষকরা এরই মধ্যে বিনা-১৭ ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। সেই জমিতে এখন শীতকালীন ফসল ফলানোর প্রস্তুতি চলছে। এভাবে দুই ফসলি জমি পরিণত হবে তিন ফসলিতে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিনা-১৭ ধানের বিশেষত্ব হলো ১১০-১১৫ দিনের মধ্যে এ ধান পাকে। যেখানে অন্যান্য ধানে সময় লাগে ১৪৫-১৫৫ দিন। এছাড়া বিনা-১৭ ধান ৩০ ভাগ ইউরিয়া সার ও ২০ ভাগ পানি সাশ্রয়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের পরামর্শে কয়েক বছর ধরেই জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, উলিপুর, সদরসহ পাঁচ উপজেলায় আগাম জাতের আমন ধান আবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিনা-১৭ ধানের প্রতি আগ্রহ বেশি। অল্প সময়ের মধ্যে ফসল কাটা যায় বলে ভালো দাম পাওয়া যায়। এছাড়া এ ধানে সার ও কীটনাশক খরচ কম। আগাম হওয়ায় জমিতে শস্যের নিবিড়তাও বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় ১ লাখ ১৭ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিনা-১৭, বিনা-৭সহ আগাম জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে।
রংপুর বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমান জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ২০১৫ সালে বিনা-১৭ ধান অবমুক্ত করে। এ জাতের বৈশিষ্ট্য হলো, চারার বয়স ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে লাগাতে হবে। ৩০ ভাগ ইউরিয়া সারসাশ্রয়ী।
তিনি বলেন, বিনা-১৭ জাত খরাসহিষ্ণু এবং ভাতের দানা ঝরঝরে সুস্বাদু হওয়ায় এ জাতটিকে আমরা গ্রিন সুপার রাইস বলে অভিহিত করেছি। এ জাতের ধান স্বর্ণা ধান কাটার এক মাস আগেই কাটা যায়। এজন্য এ অঞ্চলের শস্য নিবিড়তা অর্থাৎ রবি ফসল চাষের একটা বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে।
প্রথমবারের মতো বিনা-১৭ চাষের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, এবারই প্রথম ফুলবাড়ী, সদরসহ পাঁচটি উপজেলায় প্রদর্শনী প্লট দিয়েছি। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ধান কাটার দিন মাঠ দিবস করেছি। এ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এতে দুই ফসলি জমি পরিণত হবে তিন ফসলিতে।
বিনা-১৭ কর্তন দিবসে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাঠে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনও। তিনি বলেন, এ ধান চাষ করতে অন্য কৃষকরাও যাতে উদ্বুদ্ধ হন, সেজন্যেই আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। স্বল্পমেয়াদি ফসল হওয়ায় শস্যের নিবিড়তা বাড়বে, এতে দেশের কৃষি এগিয়ে যাবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম