কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক: কুুমিল্লা জেলায় ফসলের মাঠে প্রথমবারের মতো চাষ করা হয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিনা ধান-২১। আর প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। কম খরচে নতুন এ ধান চাষ করে দ্বিগুণ ফলন পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। বিনা ধান-২১ চাষে কম খরচের পাশাপাশি সময়ও কম ব্যয় হয়। এছাড়া দীর্ঘ খরায়ও এ ধান টিকে থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, বিনা ধান-২১ নামের ধানটি উদ্ভাবন করা হয়েছে আফ্রিকার নেরিকা-১০ জাতের ধান থেকে। তবে নেরিকার ফলন কম হতো। পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম গবেষণা করে এ ধানের ফলন বাড়িয়ে দিয়েছেন। আগে গাছের উচ্চতা কম-বেশি ছিল, সেগুলো এখন সমান করা হয়েছে। এছাড়া ধানের সাইজ চিকন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো কুমিল্লার মাঠে ৫০ হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বিনা ধান-২১ চাষ করা হয়েছে। এতে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলন এসেছে। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে আউশ মৌসুমে কুমিল্লার মাঠে বিনা ধান-২১ এর আবাদ আরও বাড়বে। এছাড়া কম সময় এবং কম খরচে এ ধান চাষে দ্বিগুণ ফলন হওয়ায় ধানটি চাষ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, আফ্রিকার নেরিকা-১০ ধানের জাত থেকে এ বিনা ধান-২১ উদ্ভাবন করা হয়। নেরিকার ফলন কম হতো, তাই কৃষকের আগ্রহ কম ছিল। তবে গামা রশ্মি প্রয়োগ করে এর ফলন বাড়ানো হয়েছে। গাছের কম-বেশি উচ্চতা সমান করা হয়েছে। মোটা ধানের সাইজ চিকন করা হয়েছে। তাই এ ধান চাষ নিয়ে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে আউশ মৌসুমে এ ধান চাষের মাধ্যমে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বেড়ে যাবে।
জেলার বুড়িচং উপজেলার দয়ারামপুর গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বাসসকে জানান, এবারের আউশ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বিনা ধান -২১ চাষ করেছেন তিনি। প্রথমে ফলন নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বাম্পার ফলনে তিনি বেশ খুশি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ ধান চাষ করবেন বলে জানান। কুমিল্লা সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, ধানটির এমন ফলন দেখে সবাই অবাক হয়েছেন। অনেক কৃষক এ ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী আউশ মৌসুমে মাঠে বিনা ধান-২১ জাতের ধানের হাসি দেখা যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বাসসকে বলেন, আউশ মৌসুমে অন্য ধান চাষে হেক্টরে আগে কৃষকরা পেতেন পৌনে ৩ টন ধান। আর এ বছর বিনা ধান-২১ চাষে প্রতি হেক্টরে কৃষকরা সাড়ে ৫ টন ধান পেয়েছেন। এছাড়া ধানের জীবনকাল কম হওয়ায় এক জমিতে চার ফসলও করা সম্ভব হচ্ছে। এ ধান চাষে সেচসহ অন্যান্য খরচ নেই বললেই চলে। এছাড়া দীর্ঘ খরায়ও এ ধান টিকে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, ফলন কম হওয়ায় আউশ মৌসুমে অনেক জমি খালি পড়ে থাকে। ব্যয় বেশি এবং ফলন কম হওয়ার কারণে কৃষকরা এ মৌসুমে ধান চাষ করতে চান না। তবে বিনা ধান-২১ এর ফলন দেখে কৃষকরা এ মৌসুমে ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. ফাহমিনা ইয়াসমিন বাসসকে বলেন, বিনা ধান-২১ জাতের ধানের চাল চিকন। কুমিল্লার মানুষ সৌখিন, তারা চিকন চাল খেতে পছন্দ করেন। এ কারণে এ ধান চাষে কৃষকরা ভালো লাভ পাবেন। এছাড়া এ ধান পানি ছাড়া ২০ দিন টিকে থাকতে পারে। ২০ দিন চুপচাপ থাকবে, আর পানি পেলে ধানটি আবারও বেড়ে উঠবে। এ কারণে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবেন।
সুত্র: বাসস/ কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম