নিজস্ব প্রতিবেদক : রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটি ইউনিয়নে উঁচু পাহাড় ও টিলা মিলিয়ে শত শত একর পাহাড়ে এবার জুম চাষ হয়েছে। পাহাড়ের যেদিকে তাকানো যায় চোখে পড়ে জুম ফসল ও ছোট ছোট মাচাংঘর, স্থানীয়দের ভাষায় জুমঘর। এসব মাচাং ঘরে থেকেই গত তিন থেকে ছয় মাস পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে জুমের ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় জুম চাষি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন।
পাহাড়ে এবার প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুমের ফসল উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে। ধানের পাশাপাশি এবার জুম ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, সিমাই আলু, কাচা মরিচ, তিল, সিম, আমিলা গোটা, কচু, সাবারাং (এক প্রকার সুগন্ধি যুক্ত পাতা), লাউ, চাল কুমড়া, কলা, আদা, হলুদের ব্যাপক মিশ্র চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার নওআদামের বাসিন্দা জীবন চাকমা বলেন, পাহাড়ে এবার জুমের প্রচুর ফলন হয়েছে চার কিলো নওআদাম ছাড়াও আশপাশের প্রায় আট থেকে দশ গ্রামের কথাও তুলে ধরেন তিনি। হাজা ছড়া, পনছড়ি, বাদল ছড়ি, কালা মুড়া, পাকুইজ্জাছড়ি, জুম্মবি আদাম, ডাঙ্গা ছড়া, খেদারাক ছড়ায় এবার জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
এরইমধ্যে বাজারে জুমের ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, পেপে, আদা, সাবারাং, কচু, বিভিন্ন ধরনের লাউ, কুমড়া বাজারে আসতে শুরু করেছে।
হাজাছড়া গ্রামের জুম চাষি পূর্ণজয় চাকমা বলেন, এবার পাহাড়ে জুমচাষ খুব ভালো হয়েছে, প্রতি হাটবারে বাজারে লক্ষাধিক টাকার জুম ফসল বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সাজেক, দোসর, নবছড়া, পেরা ছড়া, কচুছড়ি, ঘবঘোনা, অঞ্চল থেকেও ব্যাপক হারে বাজারে জুমের ফসল আসতে শুরু করেছে। যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি, নদীতে ভরা যৌবন থাকায় টলার ও ছোট নৌকায় করে জুমের ফসল খুব সহজেই বাজারজাত করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, পাহাড়ে অনেক আগে থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে জুমচাষ হয়। তবে অনেক চাষিই কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে এখন আধুনিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া রপ্ত করেছে, তাই আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন পাচ্ছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া খুব বৈচিত্র্যময়। সারাদিন রোদ রাত হলেই বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি বাঘাইছড়িতে আমার চাকরিকাল এক বছর হল শুরু থেকে এমনটাই দেখছি। বৈচিত্রের কারণেই পাহাড়ের মাটিরও ভিন্ন রুপ। এই মাটিতে যা রোপন করা হোক না কেন খুবই চমৎকার ফলন হয়। এবার বাঘাইছড়িতে জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
তবে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে জুমচাষে নিরুৎসাহিত করে মিশ্রফল বাগানে চাষীদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।
কৃষি প্রতিক্ষণ/ এম ইসলাম