কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ফেনী জেলার
দাগনভূঞা উপজেলায় চাষ হচ্ছে রাসায়নিক সারমুক্ত বেগুন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় জৈবিক বালাইনাশক ব্যবহার করে নানা রকমের বেগুন চাষ করছেন কৃষকরা। এতে কম খরচে বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের উত্তর খুশিপুর এলাকার কৃষক আবদুল গফুর, সিরাজুল ইসলাম ও সাদেকুল ইসলাম এ বছর এক একর জমিতে আবাদ করেছেন উন্নত হাইব্রিড জাতের ভেঞ্জুরা, সবুজ সাথী বেগুন। এছাড়াও দেশীয় কাঁটা বেগুন চাষ করছেন।
মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়াই পরিবশেবান্ধব চাষাবাদ জৈবিক বালাইনাশক পদ্ধতিতে বেগুন আবাদ করছেন। এ পদ্ধতি বেগুন ক্ষেতকে সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখে।
কৃষকরা জানান, পাখির আক্রমণ ঠেকাতে জাল ও পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও হলুদ ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। এটি হচ্ছে কীটপতঙ্গ দমন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্লাস্টিক বক্স ব্যবহার করা হয়। যার দুপাশে তিন কোণা ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকার শরীর থেকে নি:সৃত এক রকম রাসায়নিক পদার্থ বা স্ত্রী পোকার গন্ধ ব্যবহার করা হয় এ ফাঁদে। এর আকর্ষণে পুরুষ পোকা ফাঁদের দিকে ধেয়ে আসে এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। এতে করে জমির ফসল নিরাপদ থাকে। অতীতে এসব কীট দমনে ব্যবহার হতো বিষাক্ত কীটনাশক।
সেক্সফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় জমির ফসল নিরাপদ থাকছে। খাদ্যমান ও পুষ্টি সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষক আবদুল গফুর, সিরাজুল ইসলাম ও সাদেকুল ইসলামের চাষপদ্ধতি দেখে ওই এলাকার অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে বেগুন চাষের খরচ আগের তুলনায় এক একরে প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা কম লাগছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। যা পূর্বের ্র তুলনায় ৪০ শতাংশ।
বেগুনচাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেগুনখেতে সেক্স ফেরামোন ফাঁদ ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করছি। উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসছে। আশাকরছি আমরা লাভবান হব। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ আরো জনপ্রিয় করে তুলতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয়াসহ নানাভাবে উৎসাহিত করছে।
আগামীতে পুরো উপজেলায় নতুন এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, বেগুন একটি অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সবজি। বেগুনের মূল সমস্যা বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, এ পোকা দমনের জন্য কৃষক যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করে ফলে সবজি বিষাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এটিকে রোধ করার জন্য এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় ক্লাস্টারভিত্তিক একই সাথে ১ একর জমিতে বেগুন চাষ করা হয়েছে। যেখানে পোকা দমনের জন্য জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে কৃষক বিষমুক্ত বেগুন উৎপাদন করতে সক্ষম হবে।
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া বলেন, এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে লাভ বেশি হবে। বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমির উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস / এম ইসলাম