কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ:দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে কৃষিসমৃদ্ধ মেহেরপুর জেলায় সূর্যমূখী চাষ বাড়ছে। সারাদেশে এচাষ সম্প্রসারণে জেলা সদরের ‘আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারে’ সূর্যমুখীর বীজচাষ চলছে।
সূর্যমুখী একটি তেল জাতীয় ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো তেল। এটি শরীরের কোলেস্টেরল ঠিক রাখে।
তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামারে এবারও ২০ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলায় বিভিন্ন কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগে আরো ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করেছে। এসব সূর্যমুখী চাষের জমিতে ফুলে ফুলে ভরে গেছে।
একধরনের একবর্ষী ফুল সূর্যমুখী । ওই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো বলে এর নাম সূর্যমুখী। ফুলের পাপড়ি খেতে বাগানে আসে বিভিন্ন পাখি। ওড়াউড়ি করে বাগানময়। গত তিনবছর ধরে আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারে বীজের জন্য সূর্যমুখীর চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার মানুষ সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ছুটে আসছে বিনোদনের জন্য। দর্শনার্থীদের কেউ ফুল ছিড়ে বীজ উৎপাদনে ব্যাহত করে এজন্য তাদের ঠেকাতে লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন খামার কর্ত্তৃপক্ষ।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে চুয়াডাঙ্গা সড়কে আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার যেন সূর্যমুখী ফুলের রাজ্য। এখানে হলুদ রঙের ঝলকানি দেখতে ছুটে আসছে শত শত নারী পুরুষ। শুক্রবার শনিবার ছুটির দিনে মানুষের ঢল নামে সেখানে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সূর্যমুখী ফুল শুধু দেখতে রূপময় নয়, গুণেও অনন্য। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সূর্যমুখী মাঠটি। এখানে আগেই এসেছে বসন্ত। মৌমাছিরা শেষ বিকেলে ব্যস্ত হয় সূর্যমুখী ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে । এখানে আসা দর্শনার্থীরা নির্মল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। আগত সিংহভাগ দর্শনার্থীদের দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে, কেউবা নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। কেউবা ব্যস্ত টিকটকে ভিডিও তৈরিতে। তবে খামার কর্ত্তৃপক্ষ মোটেও খুশি নন দর্শনার্থীদের আগমনে। কারণ দর্শনার্থীরা বাগানে ঢুকে ফুল ছিড়ে উৎপাদন ব্যাহত করছে। ফুলছেড়া প্রতিরোধে থাকা খামারের শ্রমিক রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, আগত দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী গাছ ভেঙে ফেলেন। ফুলও ছিড়ে ফেলেন। তাই দর্শনার্থীদের কাছে তাদের অনুরোধ, তারা যেন সূর্যমুখী গাছ ও ফুলের কোনো ক্ষতি না করেন। মাহবুবুল মন্টু স্বপরিবারে সৌন্দর্য উপভোগে এসেছেন। তিনি জানান, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফুল তাদের খুব ভালো লাগে। এজন্য কদিন থেকে তারা স্বপরিবারে জেলা শহর থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত উপভোগ করেন ফুলের। মন্টুর সহধর্মিনী ফাতেমা বিনতে রাশেদ জ্যোতি জানান- তাদের বাড়িতে দুইশ প্রজাতির ফুলের বাগান। ফুল ও প্রকৃতি তার প্রিয়। এজন্য পরিবার নিয়ে তিনি গত দশদিন ধরে বিকেলে এখানে বেড়াতে আসেন।
মেহেরপুর আমঝুপি তৈলবীজ উৎপাদন খামারের উপ-সহাকারী পরিচালক আবু তাহের সরদার জানান- অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যসুখী চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। তা ছাড়া অন্যান্য তৈল বীজ যেমন সরিষা ও তিল এর চেয়ে তেলও বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে সুর্যমূখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে বিদেশ থেকে এর আমদানী কমে যাবে। এটি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়।