কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পেলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটি ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ নতুন ধানের জাত ব্রি ধান-১০৭ ও জিরা টাইপ জাত ব্রি ধান-১০৮। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত নতুন এই দুইজাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের অনুমোদন দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ধানের জাতগুলো অনুমোদন করা হয়। এর ফলে ব্রি উদ্ভাবিত সর্বমোট ধানের জাতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৫টি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১তম সভায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান-১০৭ প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন উফশী বালাম জাতের বোরো ধান। এ জাতটি ব্রি ২০১৫ সালে কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ লাইন বাছাইকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত করে। ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে নির্বাচিত কৌলিক সারিটি তিনবছর সফল ফলন পরীক্ষণের পর ২০১৯ সালে ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহের গবেষণা মাঠ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
২০২২ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দলের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতটি ছাড়করণের জন্য আবেদন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের আজকের সভায় সারা দেশে চাষের জন্য একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির উচ্চ ফলনশীল বালাম জাতের বোরো ধান হিসাবে লতা বালাম কে ব্রি ধান-১০৭ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।
নতুন অনুমোদিত ব্রি ধান-১০৮ জাতটি বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। এই জাত গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত। আইআর-৮০৫৬১ এবং চায়না ইনব্রিড-৩২১ এর মধ্যে সংকরায়ণ পদ্ধতিতে বিআরএইচ ১১-৯-১১-৪-৫বি উদ্ভাবিত হয়। উক্ত কৌলিক সারিটির গবেষণা কার্যক্রম ব্রিতে ২০১২ সন থেকে শুরু হয়। এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় ব্রি, গাজীপুর এবং ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয়সমূহের গবেষণা মাঠে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে নানা কৃষি পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে এই নতুন কৌলিক সারিটির উপযোগিতা, ফলন ও অন্যান্য কাংঙ্খিত বৈশিষ্ট্যসমূহের ব্যাপক ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১১১ তম সভায় এ কৌলিক সারিটি ব্রি ধান-১০৮ নামে বোরো মৌসুমে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়।
ব্রি ধান-১০৮ এর পূর্ণ বয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১০২ সেমি, এর ডিগপাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ, একই সঙ্গে হেলে পড়া সহিষ্ণু এবং জীবনকাল ১৪৯-১৫১ দিন। এই জাতের গ্রেইন টাইপ জিরা ধানের মতো। জাতটি কৃষকদের ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্ভাবন করা হয়ছে। ব্রি ধান-১০৮ এ উচ্চ ফলন ও ফাইন গ্রেইন এর সমন্বয় ঘটেছে। এ জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এর প্রতিটি ছড়ায় অধিক সংখ্যক ধান (২৫০-২৭০ টি) ঘনভাবে সন্নিবেশিত এবং গড় ফলন ৮ দশমিক ৭ টন/হে. যা ব্রি ধান-১০০ জাতের চেয়ে ১ দশমিক ০-১ দশমিক ৫ টন/হে. বেশী। ব্রি ধান-১০৮ এর ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ১৬ দশমিক ৩ গ্রাম, চাল মাঝারি লম্বা ও চিকন যা জিরা চালের অনুরুপ, ভাত ঝরঝরে, রঙ সাদা এবং আ্যমাইলোজ ও প্রোটিনের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সুত্রঃ বাসস/এম ইসলাম