কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ মাছির চাষ করে মধু আহরণের ধারা ক্রমেই বাড়ছে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মধু চাষকে সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বর্তমানে ২ হাজার মৌ খামার ও ১ লাখ ২০ হাজারের অধিক মৌ বাক্স রয়েছে। যা থেকে প্রতি বছর উৎপাদিত হয় ৪ হাজার মেট্রিক টন মধু। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে মৌ-চাষ করতে পারলে বছরে এক লাখ টনের বেশি মধু চাষ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বিসিকের তথ্য অনুসারে, এ কার্যক্রম প্রসারে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মৌ-চাষ উন্নয়ন প্রকল্প নামের’ একটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর আওতায় ইতিমধ্যে দেশের ১৫ হাজারের বেশি মৌ-চাষীকে আধুনিক পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরও ৬ হাজার নতুন মৌ-চাষী তৈরি করা হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি ওই প্রকল্প শুরু হয়েছে জুলাই-২০১২তে শেষ হবে ২০১৭ সালের জুনে। মৌ-চাষে উপযোগী ৫৫টি জেলায় বিশেষ খামার সৃষ্টি করে মধু উৎপাদনে কাজ করছে বিসিক। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক মৌ-চাষীকে খামার স্থাপনের জন্য ৯ শতাংশ হারে ব্যাংক সুদে ২৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিসিকের মৌ-চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক বলেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ফলে মধু চাষ বা চাষী বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ কাজে লাগিয়ে মৌ-চাষ করতে পারলে বছরে এক লাখ টনের বেশি মধু চাষ করা সম্ভব। মৌ-চাষকে মৌ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চাষীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি স্বল্প সুদে ঋণের মাধ্যমে চাষীদের মৌ বাক্স, মৌ মাছি ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিচ্ছি। দেশে বহু বেকার রয়েছে যারা মধু চাষে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।
মৌ-চাষী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন সরিষা, কালিজিরা, ধনিয়া, লিচুসহ বিভিন্ন ফুলের বাগানে মধু চাষ করি। এক সময় এসব ফুল চাষীরা তাদের বাগানে মৌ-চাষ করতে দিতো না, তারা মনে করে ফুলে মাছি বসলে ফুল নষ্ট হয়, ফলন কম হয়। অথচ ফুলে মৌ মাছি বসলে পরাগায়ণের ফলে অধিক ফলন হয়। যখন এসব বিষয় জানলো তখন তারা আরও বেশি সহযোগিতা করছে। এতে দুই দিকেই লাভ হচ্ছে একদিকে প্রচুর মধু উৎপন্ন হচ্ছে অপরদিকে অধিক পরাগায়ণে ফলে বেশি ফলন হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে এ্যাপিস সেরানা; এ্যাপিস মেলিফেরা এই দুই প্রজাতির মৌমাছি কাঠের বাক্সে পালনের উপযোগী। একটা কলোনিতে একাধিক চাক থাকে প্রতি কলোনিতে একটি রানী, শতাধিক পুরুষ এবং ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত শ্রমিক মৌমাছি মিলে এরা কলোনিবদ্ধভাবে বসবাস করে। এদের স্থান ত্যাগের অভ্যাস কম এবং সহজেই পোষ মানানো সম্ভব। বছরে প্রতি উৎপাদনমুখী কলোনি থেকে গড়ে ১০ কেজি পর্যন্ত মধু উৎপাদন হতে পারে।
মৌ-চাষী নরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের মৌমাছি ইউরোপীয় মৌমাছি নামে পরিচিত। একটি কলোনিতে একাধিক চাক তৈরি করে থাকে। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ-পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃথিবীতে সিংহভাগ মধুই উৎপাদিত হচ্ছে এ প্রজাতির মাধ্যমে। আমাদের দেশে এ প্রজাতির মৌমাছির চাষ শুরু হয় ১৯৯৫ সাল থেকে। বিসিক এবং প্রশিক্ষণ কর্মীদের দীর্ঘদিনের ক্রমাগত গবেষণা, প্রজনন এবং উন্নত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলেই এ অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এ প্রজাতির মৌমাছির একটি বাক্স থেকে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ মৌ-চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবাদুল্লাহ আফজাল বলেন, বর্তমানে দেশে অনেক বেশি মধু উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু দেশে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট না থাকায় উৎপাদিত মধু ব্র্যান্ড হিসেবে ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করা যাচ্ছে না। দেশী উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে কাজ করার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসবে তত দ্রুত এটাকে একটি শিল্প হিসেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম