কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রযুক্তির ছোয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি। বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যোগ হচ্ছে প্রযুক্তি। যা দুই দশক আগে কৃষিতে ছিল স্বপ্ন। মাঠ তৈরিতে গরুর বদলে স্থান করে নিয়েছে ট্রাকটর মেশিন। পরিবর্তন হয়েছে সেচ পদ্ধতিরও। জমিতে এখন ব্যবহার হচ্ছে সেচ পাম্প। এসব আধুনিক যন্ত্রাংশের ছোঁয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও বেড়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহারে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা এসেছে। এখন কম জমিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। কিছু যন্ত্রপাতি দেশীয় আমদানিকারকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হলেও বেশিরভাগই কৃষি গবেষণা কাউন্সিল থেকে উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেগুলোর বাজারজাত ও সহজলভ্য করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-২য় পর্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫১ জেলায় কৃষক পর্যায়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেগুলো জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার। এছাড়া বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার।
নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডড্রিল। জমির শক্ত মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলী বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া শস্য কাটার জন্য রয়েছে পাওয়ার রিপার মেশিন। বীজ ঝেড়ে পরিষ্কারের জন্য আছে ইউনার যন্ত্র। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ কোটি মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। তবে উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যন্ত এর প্রায় ১৪ শতাংশই নষ্ট হয়। এর পরিমাণ প্রায় ৪২ লাখ টনের মতো। যদি চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি শতভাগ ব্যবহার সম্ভব হয়, তাহলে এ ক্ষতি দূর করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
কৃষি অর্থনীতিবিদ শেখ বদিউল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, আশির দশক থেকে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, কৃষিতে যে ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে, তার মূলে এ যান্ত্রিক, উদ্ভাবনী ও তথ্যপ্রযুক্তি ভূমিকা রেখেছে। জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে দেশেও কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, যশোর, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ইউনার, ইউডার (নিড়ানির যন্ত্র), ধান, গম ও ভুট্টা মাড়াই কল প্রভৃতি যন্ত্রাংশ তৈরি হয়ে থাকে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে কৃষি উৎপাদনে খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবে এক একর জমির ধান কাটতে কৃষকের খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে কাটলে খরচ হবে মাত্র দেড় হাজার টাকা। তাই শ্রম মজুরি বাঁচাতে হলে ধান ও রবিশস্য রোপণ, কাটা ও মাড়াই সবকিছু আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর করা গেলে শিক্ষিত মানুষও কৃষি কাজে এগিয়ে আসবেন। বর্তমানে কৃষি কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আধুনিক উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষেত্রে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধেরও ব্যবহার বেড়েছে।
প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে। আধুনিক কৃষি শিক্ষার ব্যবস্থা, ভূমি সংরক্ষণ, ভূমি সম্পদ উন্নয়ন, বিজ্ঞানসম্মত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন হচ্ছে। শস্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। জানা গেছে, আধুনিক বিশ্বে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমানে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। সে দেশে এসব প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে অসংখ্য আধুনিক কৃষি খামার গড়ে উঠেছে। যেখানে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি কৃষক কাজ করছে।