কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : দেশে প্রধানত শীতকালীন সবজি ব্যাপক ভাবে উৎপাদন করা হয় এবং এর জন্য মূলত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে প্রচুর পরিমাণে চারা তৈরি করা হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসের এ সময়ের মাটিতে সাধারণত অধিক রস থাকে এবং তাপমাত্রা বেশী থাকার কারণে বিভিন্ন মাটিবাহিত রোগজীবানু অতিদ্রুত হারে বিস্তার লাভ করে বলে সবজি চারা বিভিন্ন প্রকার মাটিবাহিত রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং প্রচুর পরিমাণে সবজি চারা অবস্থায় মারা যায়।
আবার বিভিন্ন শিকরগিট কৃমি ও বিভিন্ন রোগের জীবানু সুপ্ত অবস্থায় চারায় থেকে যায় ফলে, আক্রান্ত বীজতলা থেকে পরবর্তীতে তেমন সুস্থ চারা পাওয়া যায় না ও সবজি চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে, বীজতলায় মুরগির বিষ্টা ,সরিষার খৈল ,কাঠের গুড়া পোড়ানো, ও মাটি শুকানো পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন মাটিবাহিত রোগসহ ফসলের কৃমি ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ অনেকাংশে দমন করা যায়।
রোগের বিস্তার : স্যাতঁসেতে মাটি ও মাটির উপরিবাগ শক্ত হলে রোগের প্রকোপ বাড়ে। রোগটি মাটিবাহিত বিধায় মাটি, আক্রান্ত চারা ও পানির মাধ্যমে সহজেই বিস্তার লাভ করে।
দমন ব্যবস্থাপনা : বীজতলার রোগ দমনে অনেক সময় বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নীচে বর্ণিত পন্থা ও উপকরণগুলো প্রয়োগ করে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই মাটিবাহিত রোগ বহুলাংশে দমন করা সম্ভব।
মুরগীর বিষ্টা ব্যবহার: মুরগীর তাজা বিষ্টা হেক্টর প্রতি ৫ টন হারে বীজ বপনের ২১ দিন আগে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। শুকনো জমিতে ব্যবহার করলে ভালোভাবে সেচ দিতে হবে যেন বিষ্টা ভালোভাবে পঁচে। বিষ্টা সম্পূর্নভাবে না পঁচলে বীজ পঁচে গিয়ে চারার সংখ্যা কমে যেতে পারে। বিষ্টা পচনের সময় নানা প্রকার জৈব এসিড তৈরি
হয় যা রোগজীবাণু ও বিশেষ করে কৃমি দমনে সহায়ক ভূমিকা রাখো। এ ছাড়াও মুরগীর বিষ্টায় নানা ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
কাঠের গুঁড়া পোড়ানোঃ কাঠের শুকনো গুঁড়া ৬ সেমি পরুস্তরে তৈরী বীজতলার উপরে সমানভাবে বিছিয়ে দিতে হবে। একটু কেরোসিনের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। কাঠের গুঁড়া আস্তে আস্তে পোড়ার সময় যে তাপমাত্রা সৃষ্টি হবে তা মাটিতে অবস্থিত কৃমি, তাদরে ডিম, ছত্রাকের মাইসেলিয়াম, স্পোর এবং ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু ধ্বংশ করতে সক্ষম। এরপর মাটি ভালোভারে তৈরী করে বীজ বপন করলে সুস্থ সবল চারা পাওয়া যায়।
সরিষার খৈল প্রয়োগ : বীজতলা তৈরীর ২-৩ সপ্তাহ আগে হেক্টর প্রতি ৮০০ কেজি হারে খৈল গুঁড়ো করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ লাগানোর আগে মাটি ভালৈাভাবে তৈরী করে বীজ বপন করতে হবে। মিশ্রিত খৈল পঁচে গিয়ে বিভিন্ন রকমের জৈব এসিড তৈরী করে যা রোগ জীবাণু ও গাছের কৃমি দমন করতে পারে। তাছাড়া সরিষার খৈল মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
মাটি সোলারাইজেস : সোলারাইজেসন সাধারণত রৌদ্রময় দিনে করা হয়। দেখা গেছে পলিথিন আবৃত প্লটে ৫ সে.মি. গভীরে ৪৯-৫০০ সে. তাপমাত্রায় উঠে যা অনাবৃত প্লটের চেয়ে ১২-১৫০ সে. বেশি। উচ্চতর তাপমাত্রায় ছত্রাক ও কৃমি সহজেই মারা যায়। বীজতলার মাটি তৈরীর পর কাঁদাময় করে নিতে হবে। এরপর স্বচ্ছ ১০ মি.মি. পলিথিন দিয়ে ৪ সপ্তাহ ঢেকে রাখতে হবে। খেয়াল রাকা দরকার যে পলিথিন যেন কোন প্রকারে ফুটো না হয়, অন্যথায় জমি পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত হবে না। বাংলাদেশে বছরে দু‘বার সোলারাইজেসন করা যেতে পারে। তবে সবজি চারা উৎপাদনের জন্য সেপ্টম্বর-অক্টোবর (ভাদ্র-আশ্বিন) সোলারাইজেসনের চেয়ে এপ্রিল-মে সোলারাইজেন (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) বেশি ফলদায়ক। সোলারাইজেসন জমির চারা দ্রুত বাড়ে এবং এই চারা ব্যবহার করে শতকরা ১০-১২ ভাগ ফলন বাড়ানো সম্ভব।
কৃপ্র/কে আহমেদ/এম ইসলাম