মুহাম্মদ শাহ জামানঃ বাংলামতি ধানের চাল বিদেশে রপ্তানি করে বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাসমতিসদৃশ এ ধান কৃষকের ভাগ্য ফেরাতে পারে বলেও আশা করছেন ব্রি’র সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ে প্রথম চাষকারী কৃষকরা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বোরো মৌসুমে চাষ উপযোগী বাসমতিসদৃশ এ ধান মাঠ পর্যায়ে প্রথমবার চাষে এ বছর আশাতীত ফলন ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে তা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসি’র হাতে এর বীজ পৌঁছানোর আগেই কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষিত বীজ সংশ্লিষ্ট এলাকা ছাড়াও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কেবল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রামের যে কৃষকের জমিতে এবার বোরো মৌসুমে বাংলামতি ধানের চাষ করা হয় সেখান থেকে এ পর্যন্ত দেশের ২১ জেলার কমপক্ষে ২০০ আগ্রহী চাষি, বিভিন্ন পেশাজীবী ও শৌখিন ব্যক্তি সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ ধানের আবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং ব্রি ধান-২৮ বা বোরো মৌসুমে আবাদকৃত অন্যান্য জাতের ধানের স্থলাভিষিক্ত হবে।
এমনকি হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদও কমে যেতে পারে। কারণ এ ধানের ফলন হাইব্রিড ধানের কাছাকাছি। এছাড়া বাংলাদেশের বাংলামতি ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি চালের অন্যতম প্রতিযোগী হয়ে উঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলামতি ধান থেকে যে চাল পাওয়া যাবে তা বাসমতির মতো সুগন্ধি ও উন্নতমানের হওয়ায় এ চাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে বলেও আশা করা হচ্ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে বিশেষ করে বিএডিসির মাধ্যমে উন্নতমানের বীজ তৈরি এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠ প্রদর্শনী ও মাঠ দিবসের মাধ্যমে এ ধানের সঠিক চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারণ প্রয়োজন। তা না হলে কেবল কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষিত বীজ ও চাষ সম্প্রসারণ করে এ ধান চাষে যে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগানো যাবে না এবং বীজের মান রক্ষা করে অধিক ফলন ধরে রাখা যাবে না বলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে যশোরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষের পর এবার ব্যক্তি আগ্রহে যশোরের বাইরে মাত্র ১০-১২ জন কৃষক এ ধানের চাষ করেছেন। যার প্রায় সবই পদ্মার দক্ষিণ পাড়ে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সব চাষির ধান কর্তন ও মাড়াই শেষ হয়েছে। ব্রি’র ঈপ্সিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ মে. টন ছাড়িয়ে গড় উৎপাদন ৭ টনে পৌছেছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কয়েক জায়গায় উৎপাদন ৮ টনে পেঁৗছেছে। ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতির সর্বোচ্চ একরপ্রতি ফলন ৩০-৪০ মণ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাংলামতির উৎপাদন একরে ৭০-৮০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যাবে। ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের তুলনায় কম দামে চাল বিক্রি করলেও বেশি লাভবান হবে আমাদের দেশের কৃষকরা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের দেরাদুন বাসমতি বা পাকিস্তানের বাসমতি চালের প্রতি কেজির বিক্রয় মূল্য তিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকার মানে ২০০ টাকার উপরে। বাংলাদেশ বছরে যদি ৪০-৫০ হাজার মে. টন বাংলামতি চাল রপ্তানি করতে পারে তবে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। আর এই ৫০ হাজার মে. টন চাল রপ্তানিতে যে ঘাটতি হবে তা আউশ মৌসুমে ধান চাষ সম্প্রসারণ করে মেটানো সম্ভব। ব্রি’র জেনেটিকস রিসার্চ ডিভিশনের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খায়রুল বাসার জানান, ১৯৭৬ সালে আমন মৌসুমে চাষ উপযোগী সুগন্ধী ধান দুলাভোগ বা ব্রি-৬ উৎপাদনের দীর্ঘদিন পর আমন মৌসুমে চাষ উপযোগী সুপার অ্যারোমেটিক রাইস হিসেবে আমরা বাংলামতি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি।
এ ধান বাসমতির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। খুলনা অঞ্চলে বাংলামতি ধানের চাষ প্রবর্তক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপরিচালক এসএম আতিয়ার রহমান জানান, তার পৈতৃক জমিতে বাংলামতি চাষ করে এ বছর ফলন পাওয়া গেছে একরে ৭২ মণ যা হেক্টরপ্রতি ৭ মে. টন। পত্র-পত্রিকায় এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর এ পর্যন্ত তাদের বাড়ি থেকে বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, শেরপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, ফরিদপুর থেকে এসে অথবা ফোনে যোগাযোগ করে কুরিয়ারের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করেছেন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম