কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ এক সময় খরা ও বন্যাপ্রবণ, লবণাক্ত এবং জলাবদ্ধ এলাকা আখ চাষের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। কৃষকরা শত চেষ্টা করেও এসব এলাকায় আখ চাষে সফলতা পাননি। অথচ এসব এলাকায়ও আখ চাষের বেশ বড় সম্ভাবনা রয়েছে। লবণাক্ততা, খরা, বন্যা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু আখের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। নতুন ‘বিএসআরআই আখ ৪৫’ জাতের আখ ওইসব এলাকায় আখ চাষে বিপ্লব ঘটাবে। এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল ও চিনিযুক্ত। ফলে এটি চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হবেন চাষিরাও। সূত্র জানায়, গত ২৯ মে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে জাতীয় বীজ বোর্ডের ৮৯তম সভায় ‘বিএসআরআই আখ ৪৫’ জাতের আখটি অবমুক্ত করা হয়।
বিএসআরআই’র গবেষণা পরিচালক ও আখ গবেষক ড. মো. আমজাদ হোসাইন বলেন, কিছুদিন আগে কারিগরি বোর্ড (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল) থেকে জাতটি অবমুক্ত করার অনুমতি মেলে। এরপর গত ২৯ মে চূড়ান্তভাবে অবমুক্ত হয়। সামনের মৌসুম থেকে কৃষকরা মাঠ পর্যায়ে এ জাতের আখের চাষ করতে পারবেন।
বিএসআরআই সূত্র জানায়, দীর্ঘ আট থেকে দশ বছর মাঠ পর্যায়ে গবেষণা চালিয়ে বিএসআরআই আখ ৪৫ জাতের সফলতা পাওয়া যায়। এরপর কারিগরি বোর্ডে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সবুজ সংকেত মেলে।
এ জাতটির ফলন হবে হেক্টরপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টনের বেশি। জাতটি শুধু খরা ও বন্যাপ্রবণ, লবণাক্ত এবং জলাবদ্ধ এলাকাতেই নয়, দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যাবে। এর মাধ্যমে দেশের চিনি ও গুড়ের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষকের জীবন-মানও উন্নত হবে। আগাম পরিপক্ক আখের এই জাতটি নয় মাস থেকে ১২ মাসের মধ্যে কর্তন করে মাড়াই করতে পারবেন চাষিরা। চাষাবাদে খরচ পড়বে অন্যান্য জাতের আখ চাষের মতোই। অতীতে বেশ কিছু লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের চেয়ে এ জাতটি অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ। ফলে কৃষকরা বেশ উপকৃত হবেন।
বিএসআরআই’র মহাপরিচালক ও আখ বিজ্ঞানী ড. এম. খলিলুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক যেসব ধরনের সমস্যা রয়েছে, সেসব সমস্যা মোকাবেলা করার ক্ষমতা রয়েছে এই জাতটির। খরাপ্রবণ, লবণাক্ত ও জলাবদ্ধ এলাকায় আখ চাষের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি এতে আখের উৎপাদন অনেকাংশ বেড়ে যাবে। অনাবাদি জমি আবাদি জমিতে রূপ নেবে। এটি কৃষির জন্য খুবই ইতিবাচক। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত প্রতিকূলতা সহনশীল এ জাতটি খুবই উন্নত। সরকারেরও ইচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে আখের চাষ বৃদ্ধি পাক। আমরা সে বিষয়টি মাথায় নিয়ে এ জাতটি নিয়ে কাজ শুরু করি।
কৃপ্র/এম ইসলাম