কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ খরিপ মৌসুমের আবাদি জমিতে রোপিত বাদাম উঠাতে শুরু করেছেন নাটোরের চাষিরা । উৎপাদন খরচের স্বল্পতা, ঝুঁকিমুক্ত আবাদ এবং অধিক মুনাফার কারণে নাটোরের কৃষকরা বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬০০ হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে বাদাম চাষ করেন কৃষকরা। এক হাজার ১৬৬ হেক্টর আবাদি জমির অধিকাংশ নাটোর সদর উপজেলায়- যার পরিমাণ ৮৩০ হেক্টর। এছাড়া নলডাঙ্গা উপজেলায় উল্লেখযোগ্য ৩০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়। আগের ২ বছরে যথাক্রমে ৬১২ এবং ৬৫২ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছিল।
নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার বাদাম চাষি তসলিম উদ্দিন জানান, মশুর ডাল উঠলে ঐ জমিতে চৈত্র মাসে বাদাম চাষ করা হয়। ৩ মাস পরে আষাঢ়ে ফলন পাওয়া যায়। অপর কৃষক তায়েজ উদ্দিন বলেন, আবাদি জমি ছাড়াও পতিত জমিতে আমরা বাদাম চাষ করি। এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন বলে জানান। নাটোর শহরতলীর তেলকুপি এলাকার কৃষক তমজ্জিদ আলী কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করছেন। তিনি বলেন, বাদাম চাষে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় ১৫ কেজি করে টি.এস.পি ও পটাশ সার। সামান্য সেচ লাগলেও এবছর তা প্রয়োজন হয়নি। আগাছা পরিষ্কার করতে দু’জন লেবারের সহযোগিতাই যথেষ্ট। সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। মণপ্রতি আড়াই হাজার টাকা হিসেবে প্রতি বিঘায় গড়ে উৎপাদিত ৭ মণ বাদামের বাদামের দর সাড়ে সতর হাজার টাকা। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি মুনাফা পনের হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মাঠ থেকে কৃষকরা বাদাম তুলতে শুরু করেছেন। হেক্টর প্রতি ফলন ২ টন ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি উৎপাদন প্রায় ৭ মণ।
জেলার সবচেয়ে বাদামের হাট লক্ষ্মীপুর হাট ঘুরে দেখা যায়, মণ প্রতি ২৫শ’ থেকে ২৬শ’ টাকা দরে বাদাম বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী ক্রেতা রমেজ মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুর এই দর আগামীতে আরো বাড়ছে। নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডক্টর সাইফুল আলম বলেন, মাঠে বিনা-৪, ঝিঙা ও প্রাণ চায়না জাতের বীজ চাষাবাদ হলেও লাল ও বড়দানার কারণে আকর্ষণীয় ঢাকা-১ ও ঢাকা-২ বীজ কৃষকদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ডক্টর আলহাজ উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে খাদ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বাদামের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাটোরে বাদামের রকমারী প্যাকেটজাত খাদ্য তৈরি করছে। এসব কারণে ভবিষ্যতে বাদাম চাষের পরিধি আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস