কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জাত পরিচিতি, ব্রি ধান-৬৭ এর কৌলিক সারি নং BR7100-R-6-6।উক্ত কৌলিক সারিটি IR61247-3B-8-2-1 এবং BRRI dhan36 এর সংকরায়নের পর বংশানুক্রম বাছাই(pendigree selection) এর মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে। উক্ত কৌলিক সারিটি ইরি-ব্রির যৌথ সহযোগিতার মাধ্যমে প্রজনন প্রক্রিয়ায় গবেষণাগারে ও দেশের বিভিন্ন লবণাক্ততা প্রবণ অঞ্চলে পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং কৃষকের অংশগ্রহনের মাধ্যমে জাত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বোরো মৌসুমে ব্রি ধান৪৭ জাতের চাষাবাদ উপযোগী এলাকায় ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় জাত হিসাবে ছাড়করণের জন্য চুড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। জাতটি ২০১৪ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বোরো মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে।
জাতের বৈশিষ্ট্য
- বোরো মৌসুমের লবণাক্ততা সহনশীল জাত।
- উচ্চ ফলনশীল।
- গাছের উচ্চতা ১০০ সেমি.।
- চাল মাঝারী চিকন, সাদা ও ভাত ঝরঝরে।
- ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে খাড়া।
এ জাতের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা
বি ধান৬৭ জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মি(৩সপ্তাহ পর্যন্ত) লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। জাতটি অংগজ বৃদ্ধি থেকে প্রজনন পর্যায় লবণাক্ততা সংবেদনশীল সকল ধাপে ৮ডিএস/মি মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম যা প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাত ব্রি ধান ২৮ পারে না। জাতটি ব্রি ধান ৪৭ এর মতো লবন সহ্য করতে পারে তবে এর দানা মাঝারী চিকন ও শীষ থেকে খান ঝরে পড়ে না।
জীবনকালঃ জাতটির জীবনকাল১৪০-১৫০ দিন।
ফলনঃ উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে লবণাক্ততার মাত্রা ভেদে হেক্টর প্রতি ৩.৮-৭.৪ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
চাষাবাদ পদ্ধতি
এ ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী বোরো ধানের জাতের মতই।
১। বীজ তলায় বীজ বপনঃ অগ্রাহায়নের ১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ(১৫ ই নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর)
২। চারার বয়সঃ ৩৫-৪০দিন।
৩। চারার সংখ্যাঃ প্রতি গুছিতে ২/৩ টি।
৪। রোপন দূরত্বঃ ২৫ সেমি. ? ১৫ সেমি।
৫। সার ব্যবস্থাপনা (কেজি/বিঘা)ঃ
৫.১
ইউরিয়া | টিএসপি | এমওপি | জিমসাম | জিংকসালফেট |
৩৫ | ১৩ | ১৬ | ১৩ | ১.৫ |
৬.২ সর্বশেষ জমি চাষের সময় সবটুকু টিএসটি, এমওপি, জিপসাম এবং জিংক সালফেট একসাথে প্রয়োগ করা উচিত। ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে যথা রোপনের ১৫ দিন পর ১ম কিস্তি ৩০-৩৫ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে। তবে ইউরিয়া সারের মাত্রা জমির উর্বরতা অনুযায়ী সামান্য কম বেশী হতে পারে। জিংকের অভাব দেখা দিলে জিংক সালফেট এবং সালফারের অবাব দেখা দিলে জিপসাম উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
৭। আগাছা দমনঃ রোপনের পর অন্তত ২৫-৩০ দিন পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
৮। সেচব্যবস্থাপনাঃ ভূগর্ভস্থ অথবা নদীর পানি ব্যবহার করে সেচ দিতে হবে। তবে ৩ ডিএস/মিটার এর চেয়ে বেশি মাত্রার লবণাক্ততা যাক্ত পানি কখনও সেচের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
৯। রোগবালাই দমনঃ ব্রি ধান ৬৭ জাতে রোগবালাই ও পোকার আক্রমন প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক কম। তবে রোগবালাই ও পোকার আক্রমন দেখা দিলে বালাইনাশক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা উচিত।
১০। ফসল পাকা ও কাটাঃ ধান কাটার উপযুক্ত সময় হলো ১-১৫ বৈশাখ(১৪ এপ্রিল-২৮ এপ্রিল)।
সূত্রঃ ব্রি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
কৃপ্র/ এম ইসলাম