কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যেখানে বন্যার পানি নামতে দেরি করছে সেখানে বন্যামুক্ত উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরি করা দরকার। উঁচু জায়গার অভাবে কলাগাছের ভেলা বা চাটাইয়ের উপর কাদামাটি দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে দড়ির সাহায্যে খুঁটি বা গাছের সাথে বেঁধে রাখা যায়। দাপগ বীজতলায় উৎপাদিত চারা দু’সপ্তাহের মধ্যে উঠিয়ে জমিতে রোপণ করা যায়।
নাবি জাতের ধান বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান৪৬ নাইজারশাইল, বিনাশাইল, লতিশাইল, গান্ধিশাইল, পানিশাইল, মুকুটশাইলসহ স্থানীয় আমন ধানের বীজ ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজতলায় বপন করে চারা তৈরি করা যায়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চারার পাতায় পলিমাটি লেগে থাকলে পানি ছিটিয়ে তা ধুয়ে দিতে হবে। বেঁচে যাওয়া চারার দ্রুত বাড়বাড়তির জন্য স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বিঘাপ্রতি ৭-৮ কেজি ইউরিয়া এবং ৫-৬ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করা দরকার;
জমির ভালো জায়গার সুস্থ চারা থেকে কিছু চারা তুলে নিয়ে শুন্য/ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরপরই চারার পাতা ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বা ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পরিমাণ আগা কেটে দেয়া এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে; চারা না পাওয়া গেলে স্থানীয় জাতের আউশধান যেমন হাসিকলমি, সাইটা, গড়িয়া, গাইঞ্জা, পরাঙ্গি’র গজানো বীজ আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিটিয়ে বপন করা যায়।
নাবিজাত রোপণের বেলায় ৫০ থেকে ৬০ দিনের বয়সী চারা প্রতি গুছিতে ৭ থেকে ৮টি করে আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঘন করে রোপণ করা যায়। পাট গাছের ডগা কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে এ গুলো থেকে নতুন ডালপালা বের হলে তা থেকে মানসম্মত পাটের বীজ উৎপাদন করা যায়। বন্যার পানি নেমে গেলে বিনা চাষে গিমাকলমি, লালশাক, ডাঁটা, পালং, পুঁই, ধনে, ভুট্টা, সরিষা, মাসকলাই, খেসারি, আলু আবাদ করা যায়; শিম, লাউ এসব সবজি চারার গোড়ায় পানি আসলে চারাগুলো মাটির পাত্রে বা কলার খোলে ভাসিয়ে রেখে পানি সরে গেলে আবার মাটিতে লাগিয়ে দেয়া যায়।
বন্যার সময় ভাসমান বীজতলায় বা শুকনা জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স, কাটা ড্রাম, প্লাস্টিকের ড্রাম, পুরানো টিন, পলিব্যাগ ও কলার ভেলায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, লাউ ও মরিচের আগাম চারা উৎপাদন করা যায়; তাছাড়া বসতবাড়িতে উঁচু জায়গায় বা মাচা করে সবজির চারা উৎপাদন করে পানি সরে গেলে রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর চাষ করা যায়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলী জমির রস কমানোর জন্য মাটি আলগা করে শুকনা ছাই মিশিয়ে প্রয়োজনে অল্প মাত্রায় ইউরিয়া ও পটাশ প্রয়োগ করা যায়; বন্যাকালীন সময়ে সংরক্ষিত বীজ রোদে শুকিয়ে ছায়ায় ঠাণ্ডা করে পুনরায় সংরক্ষণ করতে হবে।
রোপিত ফলের চারার গোড়ার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করে সোজা করে খুঁটির সাথে বেঁধে নেয়া যায়। গোড়ার মাটি শুকালে পরিমাণমতো সার দিতে হবে। বন্যার পর জমিতে জো আসামাত্রই চাষ ও মই দিয়ে অথবা বিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে তুলা বীজ বপন করা যায়। প্রয়োজনে পলিব্যাগে বা বীজতলায় তুলা বীজের চারা তৈরি করে নেয়া যায়। জমি থেকে পানি নেমে গেলে ইউরিয়া ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। আখের জমি বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আগে গোড়ায় মাটি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে। পানির স্রোতে আখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যথাসময়ে জমির আইলে ধৈঞ্চার বীজ বুনে দেয়া ভালো। পুরাতন পাতার প্রতিঝাড়ে ৫/৬টি সুস্থ কুশি রেখে অতিরিক্ত কুশি কেটে দিতে হবে। আখ গাছ ঢলে পড়া থেকে আখ গাছকে রক্ষার জন্য গাছের ঝাড় মুঠি করে বেঁধে দিতে হয়;
গবাদিপশুকে যথাসম্ভব উঁচু জায়গায় রাখতে হবে। এদের বন্যার দূষিত পানি কিংবা পচা পানি খাওয়ানো যাবে না। বন্যার পানি নামার পরপর মাঠে গজানো কচিঘাস কোন অবস্থাতেই গবাদিপ্রাণিকে খাওয়ানো যাবে না। পুকুরের পাড় ডুবে গেলে ছোট ফাঁসযুক্ত জাল দিয়ে বা বাঁশের বেড় দিয়ে মাছ রক্ষা করতে হবে। পানি নেমে গেলে পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে ও জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বিঘাপ্রতি ১৫-২০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া মাছের খাবার, সার নিয়মিত ও পরিমিতভাবে প্রয়োগ করতে হবে। জাল দিয়ে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। বিস্তারিত পরামর্শের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস অথবা উপসহকারি কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কৃষি কল সেন্টারে ১৬১২৩ নাম্বারে কল করে কৃষি বিষয়ক যেকোন পরামর্শ নিতে পারেন।
সুত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি মন্ত্রণালয়