কৃষি প্রতিক্ষণ টাঙ্গাইলঃ পানির ওপর ভাসছে লাউ, ধুমড়া আর বেগুন। স্থানীয়রা কুড়িয়ে নিচ্ছে ভেসে থাকা সবজি। নতুন কুড়ি নেই বাগানে। এবারের বন্যায় এভাবেই ভেসে গেছে সবজি চাষী কবিরের স্বপ্ন । জেলার দেলদুয়ার উপজেলা পাথরাইল ইউনয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে বাসিন্দা কবির ।গত ৭ বছর ধরে সবজি চাষ করছেন তিনি । প্রথমে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ শুরু করলেও বর্তমানে ৪০০ শতাংশের বেশি জায়গা জুড়ে সবজি ক্ষেত রয়েছে তার।
শীত ও গ্রীষ্মকালীন বিষমুক্ত সবজি চাষ করে সুনাম কুড়িয়েছে পুরো দেলদুয়ার জুড়ে। কিন্তু আকস্মিক বন্যার পানিই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সবজি চাষে। পুরো সবজি বাগানটি এখন ভাসছে বানের পানিতে। বর্গায় নেয়া জমি আর ঋণের টাকায় গড়ে তোলা বাগানের ক্ষতি দেখে অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সবজি চাষী কবির। জানা গেছে, জেলার দেলদুয়ার উপজেলা পাথরাইল ইউনয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে পাকা সড়কের সঙ্গেই মীর কবিরের সবজি প্রজেক্ট। সবজি চাষে লাভের মুখ দেখায় সেতু এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এবার প্রজেক্টটা আরো বাড়িয়েছিলেন তিনি। এবারো শুরুটা ভালই চলছিল। ভিন্ন ভিন্ন খণ্ড জমিতে চাষ করেছেন ভিন্ন প্রজাতের সবজি।
১৪৪ শতাংশ জমিতে বেগুন, ৭০ শতাংশ জমিতে ধুমড়া, ৪০ শতাংশে লাউ, ৫০ শতাংশ জমিতে ডাটা ও মুলা, ৫৮ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম আর ২০ শতাংশ জমিতে লাল শাক আবাদ করেছেন। তার প্রজেক্টে উৎপাদিত সবজি দিয়ে স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা অনেকটাই মিটে যেতো। সরেজমিনে দেখা যায়, লাউ, ধুমড়া, বেগুনে ভরপুর হয়ে আছে বাগান। ডাটা গাছগুলো অনেকটাই পানিতে নুইয়ে পড়েছে। লাল শাক আর ডাটা ডুবে আছে পানিতে। তৈরি করা ছাউনির ওপর শিম গাছের মাথাগুলো উঁকি মেরে কবিরকে সাহস দিলেও সপ্তাহ খানেক ধরে জমিতে পানি থাকায় গাছের গোরার অনেকটাই পচন ধরেছে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার বলছেন, গাছের গোড়ায় পানি যতদিন থাকবে সেই কদিনই গাছগুলো বেঁচে থাকবে। পানি কমা শুরু হলেই গাছগুলো মরে যাবে। কর্মকর্তাদের এসব কথা শুনে অনেকটাই দিশেহারা কবির।এ প্রসঙ্গে কবির জানান, তার হাতের নগদ তহবিলে প্রজেক্টের যোগান না হওয়ায় স্থানীয় সেতু নামের একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ তুলে প্রজেক্ট বাড়িয়েছেন। পরিচর্যার জন্য ৪ জন দিনমজুর রেখেছেন। তাদের নিয়মিত বেতন দিতে হয়। প্রতিদিন উৎপন্ন সবজি বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন। গত এক সপ্তাহ যাবত সবজি বাগানে কোনো সবজিই বড় হচ্ছে না। একটু বড় হলেই ঝড়ে পড়ছে পানিতে।
সহজেই চোখে পড়ল পানির ওপর ভাসছে লাউ, ধুমড়া আর বেগুন। স্থানীয়রা কুড়িয়ে নিচ্ছে ভেসে থাকা সবজি। নতুন কুড়ি নেই বাগানে। গত এক মাস যাবত সবজি বিক্রি শুরু হলেও গত ১০/১২ দিন ধরে শুরু হয়েছিল পর্যাপ্ত সবজি বিক্রি। ঠিক সেই সময়ই বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিল কবিরের স্বপ্ন।তিনি আরো বলেন, পানি আসার আগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতেন তিনি। কার্তিক মাস পর্যন্ত সবজি উৎপাদন ও বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আশঙ্কা করছেন সবজি গাছগুলো নষ্ট হওয়ায় তিনি প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়বেন।
স্থানীয় ব্লকে দ্বায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি এ প্রজেক্ট পরিদর্শন করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে সবজির জমিতে পানি রয়েছে। ডাটা, লাল শাক, মুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ধুমড়া, শিম, লাউ ও বেগুন গাছে পঁচন ধরেছে। আর দু-একদিন পানি থাকলে অধিকাংশ সবজি গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বেগুন গাছ মরে যাবে।
কৃপ্র/সাত্তার/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম