কৃষি প্রতিক্ষন বরিশাল : বরিশাল অঞ্চলে পাটের আবাদ কমেছে । গুনগত মানের বীজ না পাওয়া এবং প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবার ফলন ব্যাহত হয়েছে । তবে কাঙ্খিক দাম পেয়ে খুশী কৃষকেরা । আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বরিশালে ৬ জেলায় এ বছর তোষা পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। ৩’শ ৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। আর দেশি পাটের লক্ষ্যমাত্রা ৯’শ ৩০ হেক্টর । কিন্তু আবাদ হয়েছে ৭’শ ৫৬ হেক্টর জমিতে। বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল আজিজ ফরাজী কৃষি প্রতিক্ষনকে জানান, সব বছর এক রকম ফলন হয় না । এবছর প্রকৃতিক দুর্যোগের কারনে ফলন কিছুটা কম হয়েছে । পাট চাষীরা পাটের নায্যমূল পাচ্ছে বলে জানান তিনি ।
জানা যায়, কৃষিক্ষেত্রে মাদারীপুর জেলা এখন বরিশাল কৃষি অঞ্চল থেকে পৃথক হওয়াতে জেলা রয়েছে ৬টি। এরমধ্যে বরগুনা জেলায় লবণাক্ততার কারণে পাটের আবাদ হয় না। পটুয়াখালী ও ঝালকাঠীতে পাটের আবাদ উল্লেখ করার মতো নয়। কেবল বরিশাল জেলায় এবার তাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৫’শ ৮৩ হেক্টরের চেয়ে ২ হাজার ১’শ ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে। অপরদিকে পাটের কাণ্ড ও পাতা জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে, যা পরবর্তী ফসলে সহায়ক হয়। তবে বরিশাল অঞ্চলের জমি নীচু ও ঝড় জলোচ্ছ্বাসের কারণে পাটের উৎপাদন কোন কোন বছর কমে যায়। বরিশাল নগরীর সিটি বীজ ভাণ্ডারের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তোষা পাটের আঁশ সোনালী এবং দাম ভালো হওয়াতে চাষীরা এই বীজ বেশী কিনেন। ভারত থেকে আমদানী করে তোষা পাটের বীজ ৩/৪টি কোম্পানি বাজারজাত করে। তোষা পাটে বীজ শুরুর দিকে ২’শ টাকায় কিনলেও চাহিদার সময় সাড়ে ৩’শ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বীজ বিক্রি হয়েছে ১’শ ৭০ টাকা কেজিতে। আর পুরানো বীজ বিক্রি হয়েছে ১’শ ১৫ টাকা প্রতি কেজি। বিএডিসি চাহিদার পাটের বীজ সরবরাহ করতে না পারায় তারা ভারত থেকে আমদানী করা বেসরকারী কোম্পানির বীজ বিক্রি করেন। আমদানীকারকরা বাড়তি মুনাফার জন্য মওজুদ থাকা পুরানো বীজ নতুন বীজের সঙ্গে মিলিয়ে বাজারজাত করায় এই বীজে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ চারা কম গজায়। নতুন হলে ভারতীয় তোষা পাটের বীজ থেকে ৯০ ভাগ চারা গজায়। এ নিয়ে বিএডিসির বীজ বিপননের উপ-পরিচালক মো. রমিজুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে তারা ভারত থেকে পাট বীজ আমদানী করেছিলেন। ওইসময় বেসরকারী আমদানীকারকরা কৌশল করে বীজের দাম কমিয়ে দিলে সরকারী বীজের দাম বেশী হয়ে যায়। ফলে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবছর চাহিদা থাকা ৫ টন পাট বীজের বিপরীতে ১২ টন বিক্রি করেছেন। এরমধ্যে বিগত বছরের ছিল ২ টন ৪’শ কেজি বীজ ।
পাট নিয়ে গবেষণা করা ফরিদপুরের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. আ. আলীম বলেন, বিএডিসির পাট বীজের মান ভারতীয় বীজের চেয়ে ভালো। তবে চাহিদা অনুযায়ী আর সঠিক সময়ে সরবরাহ করতে পারেছে না বলে চাষীরা ভারতীয় পাটের বীজ ক্রয় করেন। এছাড়া বিএডিসির উৎপাদিত বীজের প্রচার নেই। আগে উপজেলা পর্যায়ে বিএডিসি অফিস ছিল এবং সেখান থেকে সহজেই কৃষক বীজ কিনতে পারতেন। এখন জেলা পর্যায় অফিস চলে যাওয়াতে কৃষকরা কাছাকাছি বাজারে বীজ বিক্রেতাদের কাছ থেকে বীজ কিনে থাকেন।
কৃষকদের কথা বিবেচনায় এনে তারা পাটের বীজ ও মানের উন্নয়নের জন্য গবেষণা করে যাচ্ছেন। বাজারে নিম্নমানের বা মেয়াদ উত্তীর্ণ বীজ দেখভালের বিষয়টি করে থাকেন বীজ প্রত্যয়ন বিভাগ। এই দপ্তরের সহকারী অঞ্চলিক বীজ প্রত্যায়ন অফিসার মো. জলিলুর রহমান বলেন, পাটের বীজে ভেজালের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। বরিশাল অঞ্চলে পাটের আবাদ কম হওয়াতে তারা এই বিষয়ে নজর দেননি বা পরীক্ষা করে দেখেননি। তবে নিম্নমানের পাট বীজ বাজারজাতের বিষয়টি এখন জানতে পারায় তা খতিয়ে দেখবেন।
পাটের দর নিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী ও চাষী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ জানান, এবছর সরকার তোষা পাটের জন্য ২১’শ টাকা মণ ধার্য্য করেছেন। ১২ জুলাই থেকে ফরিদপুরে পাট ক্রয় শুরু করেছেন। তবে টাকার অভাবে এই ক্রয় এখন ধীর গতিতে চলছে। এই সুযোগে আর চাষীদের নগদ টাকা প্রয়োজন হওয়াতে ফড়িয়ারা ২ থেকে ৩’শ টাকা কম দামে পাট কিনে মওজুদ করছেন। সরকার এখন আর্থিক বরাদ্দ না বাড়ালে পরবর্তীতে বাড়তি দামে ফরিয়াদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করতে হবে। বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, চাষীরা যাতে ন্যায্যমূল্য সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলব তিনি ।
কৃপ্র/ আতিক/ কে আহমেদ/এম ইসলাম