কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জনপ্রিয় উচ্চফলনশীল ও প্রচুর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফলের এখন চাষ হচ্ছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ এলাকার কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ। দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় ড্রাগন ফলের চাষ ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার সর্বত্র। সম্প্রতি মালয়েশিয়া, চায়না, শ্রীলঙ্কাসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ এ ফল চাষে এগিয়ে যাচ্ছে।
গ্রীষ্ম-মণ্ডলীয় ও এর নিকটবর্তী অঞ্চলের ক্যাকটাস প্রজাতির বিদেশি এ ফল গাছ বাংলাদেশে চাষের উপযোগী হওয়ায় ব্যাপক হারে ড্রাগন ফল চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ এলাকায় উন্নত জাতের লাল ড্রাগন ফল (সাদা শাঁস) ও লাল ড্রাগন ফল (রঙিন শাঁস) বেশি চাষ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নগরকান্দা উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তোলার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিনামূল্যে উপকরণ, প্রাথমিক খরচ এবং পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশুতোষ কুমার বিশ্বাস জানান, উপজেলার ১৫ জন কৃষক জনপ্রতি দশ থেকে পঁচিশ শতাংশ জমিতে বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। এ ছাড়া বসত বাড়ির আঙিনায়, ভবনের ছাদে অনেকেই ড্রাগন ফলের চাষ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেসব জমি পূর্ণ সূর্যলোক পায়, বর্ষায় পানি উঠে না বা স্যাঁতসেঁতে থাকে না এমন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষের উপযোগী। বাগান করার মাত্র নয় মাসের মধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। বর্তমানে এক একটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে দেখা গেছে। তবে চার-পাঁচ বছর বয়সের একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনের ড্রাগন ফল পাওয়া সম্ভব। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে বছরে ৮০ কেজি পর্যন্ত ফলন হতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা থাকলে একটি গাছ হতে ২০ থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। নগরকান্দায় উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিক্রি করে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে জমি থেকেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুবই মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন ফলে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও প্রসাধনী গুণ থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা দেখা যাচ্ছে।
ড্রাগন ফলে প্রচুর আঁশ থাকায় হজম শক্তি বাড়াতে ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ক্যারোটিন থাকায় স্মৃতি শক্তি ও চোখের জ্যোতি বাড়ায়। ভিটামিন বি-২ থাকায় ক্ষুধা বাড়ায়, স্বাভাবিক কর্মস্পৃহা উন্নত করে ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। বি সিটোস্টরেল থাকায় হাইপার টেনশন কমায়। ত্বকের মসৃণতা ও আর্দ্রতা ধরে রাখে। ভিটামিন বি-৩ থাকায় শরীরের রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, খারাপ কলেস্টোরেল ও রক্ত চাপ কমায়। রক্তের শিরা প্রশস্ত করে ও মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়। ড্রাগনের সাদা শাঁসের রস প্রসাধন গুণের আধার। ড্রাগন ফলের রস দিয়ে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করলে স্বাভাবিক বার্ধক্য বিলম্বিত করে, ত্বকে ভাঁজ পড়া বন্ধ হয়, ত্বকের বলি রেখা ও কুঁচকানো দাগ মুছে লাবণ্যতা বৃদ্ধি করে। ড্রাগন গাছের কচি ডগা বা কাঁচা ড্রাগন ফলের পেস্ট মুখ ও ত্বক পরিচর্যায় খুবই উপকারী।
সুত্রঃ bd-pratidin.com