কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের রাতারকুল এলাকার চাষি জাহাঙ্গীর আলম ১০০ শতক জমিতে ‘রেড লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। গত বছর থেকে পেঁপের ফলন পাচ্ছেন তিনি। প্রতি মাসে পেঁপে বিক্রি করে তার হাতে আসছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো। খবর বাসস।
জাহাঙ্গীর আলমের মতো লোহাগাড়ার হাজারো কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই ‘রেড লেডি’ পেঁপে। এসব কৃষক এর আগে ধান চাষ করে লাভের মুখ দেখেননি। কিন্তু রেড লেডি চাষ করে ভালোই আয় করছেন। এ জাতের পেঁপের প্রতিটি গাছেই ফলন হয়। পেঁপেও ধরে দেশীয় জাতের চেয়ে অনেক বেশি। স্বাদ ও ঘ্রাণ ভালো বলে বাজারে এ পেঁপের চাহিদা অনেক।
এক সময় কৃষকেরা ধান চাষে লাভ না পাওয়ায় জমিগুলো খালি ফেলে রাখতেন। এখন এ জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপের চাষ করেন তারা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন। বর্তমানে চুনতি ইউনিয়নের কয়েকশ’ কৃষক রেড লেডি চাষ করছেন। এছাড়া উপজেলার পুঁটিবিলাসহ পাশ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতেও এ জাতের পেঁপের চাষ শুরু হয়েছে।
কৃষিকরা জানান, এ জাতের পেঁপেগুলো বেশ বড়। ফলের রং লাল-সবুজ। এক একটি ফলের ওজন দেড় থেকে দুই কেজি হয়। এ জাতের পেঁপে স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুঘ্রাণযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৪০টির বেশি ফল হয়। পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলে দূর-দূরান্তে বাজারজাত করা যায়। এই জাতের পেঁপের রোগ-বালাই সহ্য করারও ক্ষমতা আছে।
চুনতি ইউনিয়নের রাতারকুলে জাহাঙ্গীর আলমের পেঁপে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ণবয়স্ক প্রায় প্রতিটি গাছেই ফলন এসেছে। নতুন করে বেশ কিছু পেঁপের চারাও লাগানো হয়েছে। জাহাঙ্গীর জানান, গত বছর তিনি ১০০ শতক জমিতে দেড় হাজারের মত পেঁপের চারা লাগিয়েছিলেন। চারা লাগানোর সাত-আট মাসের মধ্যে সব গাছেই ফলন এসেছিল। এ বছর পেঁপে বিক্রি করে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় হবে আশা করছেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক মো. শাহ আলম জানান, গত বছরের শুরুর দিকে লোহাগাড়ার বিভিন্ন নার্সারি থেকে রেড লেডি জাতের চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন তিনি। এ পেঁপের চারা লাগানোর চার-পাঁচ মাসের মধ্যে ফুল আসে এবং সাত মাস পর ফল পাওয়া যায়। চারাগুলো একটানা দুই বছর ভালো ফলন দেয়।
পেঁপে চাষী শফিউল আলম জানান, ‘৪০ শতক জমিতে পাঁচশ’ পেঁপের চারা লাগিয়েছেন। খরচ হয়েছে ‘১ লাখ ২০ হাজার টাকা। উপজেলার বিআরডিবি অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পানি সেচের যন্ত্র কিনেছেন। তার মতে, চাষীরা যদি স্বল্প সুদে ঋণ সহযোগিতা পায়, তাহলে তারা পেঁপে চাষ করে আর্থিক উন্নয়ন করতে পারবে।’
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘রেড লেডি জাতের পেঁপে খুব মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণও ভালো। স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়। যারা এ পেঁপের চাষ করছেন তাঁদের প্রত্যেককে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
কৃপ্র/ কামাল / এম ইসলাম