কৃষি প্রতিক্ষন রিপোর্ট : বন্যায় দেশের ২৪টি জেলার প্রায় ৯ লাখ ৩৪ হাজার বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সংকটে পড়েছেন প্রায় ৫ লাখ কৃষক । বন্যার এ ধকল কাটিয়ে উঠতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে সরকার।
প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৪ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ ও অর্থসহায়তার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও কৃষকের একটি তালিকা করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। এসব এলাকার কৃষকদের হালনাগাদ তথ্যও প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করছে ডিএই।
এরই মধ্যে এসব এলাকার কৃষকদের জন্য সম্ভাব্য প্রণোদনার পরিমাবিষয়েও একটি বিশ্লেষণ করেছে সংস্থাটি। প্রাথমিক এ তালিকা বর্তমানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ অনুমোদন পেলে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হবে। চলতি সপ্তাহেই কৃষিমন্ত্রী প্রণোদনা-সংক্রান্ত বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারেন বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে ।
কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, এ প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ডিএইর মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান। তবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বন্যা-পরবর্তী ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বন্যা-পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, এরই মধ্যে বীজতলা তৈরি ও বীজসহায়তা দেয়া শুরু হয়েছে। যেসব এলাকার বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে পুনরায় বীজতলা তৈরি ও ফসল আবাদে কৃষকদের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বিএডিসির কাছে পর্যাপ্ত বীজ মজুদ রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় বীজ পাঠানো হয়েছে। বিকল্প পদ্ধতিতে অন্যান্য ফসলের আবাদের প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য রবি মৌসুমে ফসল আবাদে প্রণোদনা কর্মসূচি নেয়া হয়। ওই কর্মসূচির আওতায় ২৪ জেলার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৩ কৃষককে মোট ৩২ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার ১৬০ টাকার কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এ বছর ২৪ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় পাঁচ লাখ কৃষকের মধ্যে অন্তত চার লাখ কৃষককে এ প্রণোদনা দেয়া হবে।
ডিএই সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ক্ষতির কবলে পড়া ফসলের মধ্যে রয়েছে— আউশ, আমনের বীজতলা, বোনা আমন, রোপা আমন, শাকসবজি, মরিচ, কলা ও আখের ক্ষেত। চলতি মাসের শুরুতে সর্বশেষ হিসাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কবলে পড়া জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে— সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮০০ বিঘা, জামালপুরে ১ লাখ ৪১ হাজার ২২০ ও টাঙ্গাইলে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৬ বিঘা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, বগুড়া, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটেও বেশকিছু এলাকা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। অন্যদিকে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নাটোর, মাদারীপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বরিশাল জেলার ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ৮৯ হাজার ৬৬৪ বিঘা আউশ, ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৫ বিঘা রোপা আমন, ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ বিঘা বোনা আমন ও ৩৭ হাজার ৩৬০ বিঘা জমির সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমনের বীজতলা, পাট, কলা, আখ ও মরিচক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম