কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলায় বেদেনা ফল চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক শফিকুল ইসলাম রবু। তিনি উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক। কৃষি ফসলের পাশাপাশি তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বেদেনারও চাষ করেছেন। জেলায় তিনিই একমাত্র ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে বেদেনা চাষ করে সফলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন। খবর বাসস।
উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের মৃত সায়েদার রহমানের তৃতীয় পুত্র রবু ১৯৮৯ সালে ডিগ্রি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে যখন হতাশায় ভুগছিলেন তখন তিনি তার এক খন্ড জমিতে কৃষিজ বাগান গড়ে তোলেন। পরিবারের লোকজনদের একরকম ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই মিশ্র বাগানে পেঁপে, করলা, ঢেঁড়শ ইত্যাদি চাষ শুরু করেন।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে তিনি সফলতার মুখ দেখতে পারেন নি। তাই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির লক্ষে ১৯৯৬ সালে তিনি বিদেশ যাওয়ার সিন্ধান্ত নেন। কিন্তু এক প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধ ভাবে মালোয়েশিয়ায় পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন এবং প্রায় ৬ মাস ধরে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আটক থাকেন। কোন কাজ না পেয়ে এবং খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টের এক পর্যায়ে দেড় বছর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে এসে তিনি বগুড়ায় প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় সফলতা আনতে না পেরে তাকে হতাশা ঘিরে ধরে । এরপর ২০১৩ সালে তার বড় ভাই প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের পরামর্শে তার পৈত্রিক ২ বিঘা জমিতে মাটি ভরাট করে ফলের মিশ্র বাগান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এ মিশ্র বাগানে আম, লেবু ও পেয়ারার পাশাপাশি বেদেনার চারাও রোপন করেন। বর্তমানে তার মিশ্র বাগানে ৪৮টি আমগাছ, ১৬৪টি লেবু গাছ, ১৪৮টি পেয়ারা গাছের সাথে তিনি বেদেনার গাছ লাগান ১৬০টি। তিনি বগুড়া থেকে ভালো মানের বেদেনা চারা সংগ্রহ করেন। তিন বছর পর এ বছর তার বাগানে বেদেনা গাছে রসালো ফল ধরতে শুরু করে।
বর্তমানে তার বাগানে বেদেনা গাছের ডালে ডালে লাল রঙ্গের বেদেনা শোভা পাচ্ছে। তার সাথে লেবু গাছে লেবু আর পেয়ারা গাছে পেয়ারা ঝুলছে। এক অভাবনীয় সুন্দর দৃশ্যের অবতারনা হয়েছে রবুর এই মিশ্র বাগানে। চলতি মৌসুমে তিনি আম ও পেয়ারা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন ভালোই। পাশাপাশি চলছে বেদেনা’র যতœ ও পরিচর্যা।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের বেদেনাগুলোকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করার জন্য পিপি পলিথিন ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ বেদেনায় তিনি লাখ টাকার ওপরে আয়ের কথা ভাবছেন। তার বাগানের পরিচর্যার কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ জন বেকার যুবকের।
শফিকুল ইসলাম রবু জানান, বড় ভাইয়ের পরামর্শক্রমে ও নিজ উদ্যোগে তিনি এই মিশ্র ফল বাগান গড়ে তুলে প্রমাণ করেছেন বেকারত্ব কোন অভিশাপ নয়। দেশের বেকার যুবকরা তার এই উদ্যোগকে অনুসরণ করে ব্যক্তিজীবনে লাভবান হতে পারবেন।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, শিয়ালা গ্রামের শফিকুল ইসলাম রবু মিশ্র ফল চাষী হিসেবে এক সফল ব্যক্তি। তিনি বেকারত্বকে জয় করেছেন। শিক্ষিত যুবকরা তাকে অনুসরণ করে বেকারত্বকে জয় করতে পারবে। জেলায় তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তার মিশ্র ফল বাগানে বেদেনার চাষ শুরু করেছেন। আমি একাধিকবার তার বাগান পরিদর্শন করেছি। আমার অফিস সব সময় তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম