কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টানা বৃষ্টিতে সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের জনপদ পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার শ্যামনগর সদর, ভুরুলিয়া, কাশিমাড়ী, নূরনগর, রমজান নগর, ঈশ্বরীপুর, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের সকল নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খাল-বিল, পুকুর, নদী-নালা, সব একাকার হয়ে গেছে। অনেক ঘর-বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র অসহায় মানুষেরা।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। গত ২২ আগস্ট সকালে প্লাবিত এলাকার বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, সদরসহ বিভিণœ জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে ক্ষতিগ্রস্তরা আতঙ্কিত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গত দুদিনের টানা বর্ষণে পাউবোর দুর্বল বেড়িবাঁধে ফাটল ভয়াবহভাবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া, জোয়ারের প্রবল ঢেউয়ের তোড়ে বাধের ফাটলগুলো প্রতিনিয়ত ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যে কোন সময় যেকোন স্থান ভেঙে যেয়ে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হতে পারে।
অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট নদীগুলোতে ব্যাপক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জ, রমজান নগর, কৈখালী, ও কাশিমাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ২০০ জায়গায় ফাটল ধরেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ৫/১৫/ ও ৭/১ নং পোল্ডারের যে সকল স্থান খুবই ভয়াবহ তার মধ্যে রয়েছে, ১নং ডিভিশনের গাবুরার পারশেমারি, কালিবাড়ি, নাপিতখালি, সোরা, ৯ নং সোরা, চকবারা, বুড়িগোয়ালিনি ইউপির দাতিনাখালি, পূর্ব দূর্গাবাটি, ভামিয়া, পোড়াকাটলা, বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন, কাশিমাড়ি ইউপির ঝাপালি, ঘোলা, আটুলিয়া ইউপির বিড়ালক্ষি, মুন্সিগঞ্জ ইউপির হরিনগর, চুনকুড়ি, সিংহড়তলী, মথুরাপুরজেলে পাড়া, কদমতলা, মুন্সিগঞ্জ সরদার পাড়া, কৈখালী ইউপির পূর্ব কৈখালী, পশ্চিম কৈখালী, নৈকাটি ও ২নং ডিভিশনে পদ্মপুকুর ইউপির চন্ডিপুর, খুঁটিঘাটা, বন্যতলা, কামালকাটি। এসব ইউনিয়নের ৩৫ টি গ্রামের সাধারণ মানুষ বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শ্যামনগর পাউবোর দায়িত্বে থাকা নিখিল চন্দ্র জানান, বৃষ্টির কারণে এর আগেও পাউবোর বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছিল। সে বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাফর রানা বলেন, এলাকায় ৩নং সর্তক সংকেত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন সমস্যার খবর আমাদের কাছে নেই। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার ঝাপালী নামক স্থানে পাউবোর বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছিলো।স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রামবাসীরা ভাঙ্গনকৃত বাঁধটি আটকাতে সক্ষম হয়েছে। তবে উপজেলার ১ ও ২নং ডিভিশনের পাউবোর বাঁধের বেশ কিছু স্থানে ভয়াবহ ফাটল ধরেছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে ডিসি স্যার কে জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা ৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন, তিনি প্লাবিত মানুষের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি বলেন, টানা বর্ষণে শ্যামনগরে চিংড়ী ও কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন পাউবোর বেড়িবাঁধে ব্যাপক ধস নেমেছে। যে কোন সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকতে পারে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম