কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টানা বর্ষণ আর জোয়ারের পানিতে বরিশালের উজিরপুরের পৌরসভাসহ ৪ ইউনিয়ন প্লাবিত, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলী জমির বীজতলা, পানের বরজ, রোপা আউশ আমন ও শাকসবজি। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘেরের কোটি টাকার মাছ। গৃহহীন হয়ে পড়েছে কয়েকশত পরিবার ও তাদের গৃহপালিত পশু-পাখি। কর্মাভাবে হাজারো লোক অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সামগ্রী না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা। খবর নায়া দিগন্ত অনলাইন
সন্ধ্যা নদীর কোল ঘেষে উজিরপুরে পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড হানুয়া বারপাইকা চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পুরো এলাকা। এছাড়া গত কয়েকদিনের অতিমাত্রার বৃষ্টির পানিতে পৌর এলাকার ২, ৩, ৬, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন মহল্লার রাস্তাঘাট ডুবে পানিবন্দি হয়ে পরেছে শতাধিক পরিবার।
উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের বান্নার বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। বড়াকোঠা ইউনিয়নে সন্ধ্যা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে চথলবাড়ী, মালিকান্দা, যোগীরকান্দা, নারিকেলী, চৌধূরীরহাট, হারতা ইউনিয়নের নাথারকান্দিসহ বিভিন্ন অঞ্চল, সাতলা ইউনিয়নের রাজাপুর, বিশারকান্দি, শিবপুর, ওটরা ইউনিয়নের ভবানীপুরসহ বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পৌর এলাকার বাসিন্দা রামদাস, মুক্তিযোদ্ধা ননী গোপাল জানান, তাদের একমাত্র সম্পদ পানের বরজ তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হানুয়া বারপাইকা চরাঞ্চলের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর তালুকদার, রশিদ ফকির, ইউনুচ ঢালী, মনির ঢালীসহ অনেকের ঘরের মেঝে পানির নিচে। এছাড়া জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে ওই এলাকার রাস্তাঘাট পানির তলদেশে হারিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী নৌকায় যাতায়াত করছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহম্মদুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে আমাদের লোকজন পাঠিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন হলে যথাসম্ভব চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন তালুকদার জানান, আমরা বিভিন্ন ব্লক সুপার ভাইজারদের এলাকায় পাঠিয়েছি। এ পর্যন্ত জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৭শ’ ৭৮ হেক্টর ফসলি জমির আমান বীজতলা, রোপা আউশ-আমন, শাকসবজি ও পানের বরজ। পানি কমার সাথে সাথে মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, জোয়ারের পানিতে ইতিমধ্যে অনেক মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য লোক পাঠানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা জানান, দুর্গতদের তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উজিরপুর পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন বেপারী জানিয়েছেন, পৌরসভার প্রায় এলাকাই চর ও নিম্নাঞ্চল। চর অঞ্চলে বেরিবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে ওই এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল জানান, এই উপজেলায় জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ফসলী জমির ফসল, মাছের ঘের, পানের বরজসহ বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট হয়েছে। অসহায় মানুষের সহযোগীতার জন্য প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম