মাছ চাষীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ডিএপি সার কারখানায় অ্যামোনিয়া গ্যাসের ট্যাংক বিস্ফোরণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর। গাছ-পালা, লতা-গুল্ম, জলজ ও ডাঙার পাণীকুলের করুণ চিত্র মানুষকে ভাবাচ্ছে। সবুজ গাছ-গাছালি অ্যামোনিয়ার প্রভাবে বিবর্ণ হয়ে গেছে। একইভাবে পুকুর-নালা এবং মাছের ঘোনায় হাজার হাজার মৃত মাছের ভেসে উঠার দৃশ্যে মনে হচ্ছে এলাকায় মড়ক লেগেছে। খবর ইত্তেফাক অন লাইন।
প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাছ চাষীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আশপাশের মৌসুমী শাক-সবজি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। গত সোমবার ট্যাংক বিস্ফোরণের পর থেকে আস্তে আস্তে তার ক্ষতির দিকগুলো ফুটে উঠছে। গতকাল বুধবারও বাতাসে অ্যামোনিয়ার ঝাঁজালো গন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে অ্যামোনিয়া ট্যাংকের বিস্ফোরণের পর গতকাল শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শিল্পমন্ত্রী দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এ দুর্ঘটনা কারো গাফিলতির জন্য হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) গঠিত ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তিনদিনের মধ্যে তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট দেয়ার কথা। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, যে ট্যাংকটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে তা নির্মাণে ত্রুটি কিংবা মেটেরিয়াল ত্রুটি ছিল কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হবে। এক্ষেত্রে কিছু নমুনা মেটেরিয়াল বুয়েটে পরীক্ষার জন্য নেয়া হবে।
জাপান ও চীনের অর্থ সহায়তায় প্রাথমিক অবস্থায় ১২শত কোটি টাকা ব্যয়ে ডিএপি-১ এবং ডিএপি-২ ইউনিট দু’টি নির্মাণ করা হয়। ডিএপি-১ ইউনিটটি চীনের কারিগরী সহায়তায় এবং ডিএপি-২ জাপানের কারিগরি সহায়তায় নির্মিত হয়।
ডিএপি সার কারখানা নির্মাণকালীন সময় এর কাজের সাথে জড়িত ছিল এমন এক কর্মকর্তা জানান, ডিএপি-এর দু’টি ইউনিটের জন্য দু’টি ছোট ট্যাংক চীন থেকে এবং অপর বড় ট্যাংকটি জাপান থেকে আনা হয়। গত সোমবার দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া ট্যাংকটি চীন থেকে আনা। সূত্রে জানা যায়, ডিএপি এবং ডিএপি-২ সার কারখানা দু’টিতে ব্যবহূত অ্যামোনিয়া সাধারণত পার্শ্ববর্তী কাফকো ও সিইউএফএল থেকে এনে মজুদ করে রাখা হতো। তবে ডিএপি সার উত্পাদনে সবচেয়ে বেশি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত ফসফরিক এসিড বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কাফকো ও সিইউএফএল বন্ধ থাকায় অ্যামোনিয়ায় গ্যাস নিয়েও সংকট দেখা দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিএপি সার কারখানার প্রাত্যাহিক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। একই সাথে নির্মাণ পর্যায়ে প্রকৃত মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে কিনা তাও তলিয়ে দেখার বিষয়। কারখানা যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্রুটি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। কারণ ২০০৬ সালে ডিএপি-১ কারখানাটি উত্পাদনে যায়। এরপর ডিএপি-২ উত্পাদনে যায়।
উত্পাদনের প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উত্পাদন হচ্ছে না বলে জানা যায়। বর্তমানে তা তলানিতে পৌঁছেছে। প্রতিটি ইউনিট ২৪ ঘন্টায় ৮০০ মেট্রিক টন করে সার উত্পাদন করার লক্ষ্যে মাত্রা ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি ইউনিট ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২০০ টন উত্পাদন করছে বলে জানা যায়। বিসিআইসি’র কারখানাটি বর্তমানে ভর্তুকীতে চালিত হয়।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ট্যাংক বিস্ফোরণ এলাকার দু’টি পুকুরের পানি ও বাতাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এতে দেখা যায়, যে পানিতে এবং বাতাসে এখনও পরিবেশ নীতিমালার চেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যামোনিয়া পানিতে ও বাতাসে বিদ্যমান। গত ২৪ ঘন্টার বিশ্লেষণ অনুযায়ী দু’টি পুকুরের পানিতে পিএইচ যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৪ এবং ৮ দশমিক ৫৪। কিন্তু পরিবেশ বিধিমালা অনুযায়ী আদর্শমান ৬ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫। একই সাথে দু’টি পয়েন্টে সংগৃহিত পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ১ দশমিক ৩৯ এবং ৪।
কিন্তু আদর্শমান হচ্ছে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫ পর্যন্ত। আবার কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (সিওডি) যথাক্রমে ৩২৪ ও ২৬৪। কিন্তু আদর্শমান ২০০ এর কম। ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যায়, আদর্শমানের সাথে অনেক পার্থক্য। অন্যদিকে গত ৮ ঘন্টায় কারখানা এলাকার ভেতর বাতাসে অ্যামোনিয়ার মাত্র ৯২ পিপিএম। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক পানি নিক্ষেপের ফলে অ্যামোনিয়া মিশ্রিত ওই পানি জলাশয়, খাল-নালা নর্দমায় পড়ার ফলে অতিমাত্রার অ্যামোনিয়ার কারণে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী মারা যায়।
কৃপ্র/ এম ইসলাম