কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঝাউগাছ কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। উখিয়া উপজেলার মনখালী থেকে টেকনাফের বড় ডেইল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঝাউ গাছ কাটা হচ্ছে ব্যাপক হারে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, দুর্বৃত্তদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা।খবর প্রথমআলো অনলাইন।
প্রতিটি ঝাউগাছ বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। মাছ ধরার নৌকা তৈরি, ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের খুঁটি এবং ভবন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজে ঝাউগাছ ব্যবহার করা হয়।উখিয়া উপজেলার মনখালী ও টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর, পুরানপাড়া, শীলখালী এলাকায় ঝাউবাগান ঘুরে ৪ থেকে ৬ গজ পর পর কেটে নেওয়া গাছের গোড়া দেখা যায়। দেখলে বোঝা যায়, গাছগুলো দু-তিন দিন আগে কাটা হয়েছে।
পুরানপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, প্রতি রাতেই চোরের দল ঝাউগাছ কেটে জিপে ভরে পাচার করছে। চোরদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। তারা এলাকার পাহাড়-জঙ্গলে বসবাস করে। সংসার চালানোর জন্য তারা ঝাউগাছ কেটে নিচ্ছে।
মনখালী এলাকার জেলে নুরুল আজিজ বলেন, বাহারছড়া ও মনখালী এলাকায় মাছ ধরার নৌকা আছে সাত শতাধিক। এসব নৌকা তৈরি হয়েছে সংরক্ষিত বনের চোরাই কাঠ ও ঝাউগাছ দিয়ে।
বাহারছড়ার শামলাপুরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও নবী হোসেন বলেন, গত কয়েক মাসে সংঘবদ্ধ চক্র মনখালী থেকে শীলখালী পর্যন্ত বাগানের প্রায় ১৫ হাজার ঝাউগাছ কেটে নিয়েছে। কারা গাছ কাটে, তা স্থানীয় বনকর্মীরা জানেন, কিন্তু তাঁরা নীরব থাকেন। বনকর্মীরা মাঝেমধ্যে কাটা গাছ উদ্ধার করলেও মামলা করেন না।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০২-০৩ সালে উখিয়া উপজেলার মনখালী থেকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং কাটাবুনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার সৈকতে (১ হাজার ১০০ একর জায়গা) ১২ লাখের বেশি ঝাউগাছ রোপণ করা হয়।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আয়াছ বলেন, পাঁচ বছর আগেও বাহারছড়া বাগানে প্রায় ৮০ হাজার ঝাউগাছ ছিল। এখন অর্ধেকও নেই।
বনকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে শীলখালী বন বিটের ফরেস্টার নূর নবী মুঠোফোনে বলেন, ‘একটি চক্র রাতের অন্ধকারে গাছ কাটছে। কয়েক দিন আগেও ছয়-সাতটি গাছ উদ্ধার করেছি।’ মামলা করেছেন কি না, জানতে চাইলে নূর নবী বলেন, ‘আমি এখন ছুটিতে আছি। কর্মস্থলে গিয়ে মামলা করব।’
উপকূলীয় বন বিভাগের শামলাপুর বন বিটের কর্মকর্তা হোসেন তৌফিক ইমাম বলেন, ‘দিনের বেলায় পাহারা বসিয়ে কোনোমতে ঝাউবাগান রক্ষা করছি। কিন্তু লোকবলের সংকটের কারণে রাতে ঝাউগাছ কাটা বন্ধ করতে পারছি না।’
উখিয়ার মনখালী বন বিটের কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, রাতে চোরের দল বাগানে ঢুকে গাছ কেটে নিচ্ছে। তিনি বলেন, দেড় বছর আগেও মনখালী বাগানে প্রায় ২০ হাজার গাছ ছিল। আর এখন আছে তিন-চার হাজার গাছ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, জলোচ্ছ্বাসে উপড়ে পড়ার পাশাপাশি অনেক ঝাউগাছ কাটাও পড়ছে। এ কারণে পরিবেশ-প্রতিবেশ হুমকিতে পড়েছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম