কৃষি প্রতিক্ষন চট্টগ্রাম : আতঙ্ক কাটেনি চট্টগ্রামের আনোয়ারার ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার কারখানার পাশের গ্রামের বাসিন্দাদের। সোমবার রাতে দুর্ঘটনার পর আতঙ্কে কারখানার আশপাশের পাঁচ গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। সেদিন বাতাস পশ্চিমমুখী থাকায় ছড়িয়ে পড়া অ্যামোনিয়া গ্যাস কর্ণফুলী নদীর ওপারে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা ও হালিশহরের দিকে চলে যায়। এ কারণে নদীর পশ্চিম পারের বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে।
দুর্ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটার দূরের বন্দর গ্রামের মহাজনপাড়ার গৃহিণী নিধু সিংহের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ঘটনার রাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে তাঁরা ভয়ে ঘর ছেড়ে যান। গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে এমন খবর শুনে তাঁরা দুই কিলোমিটার দূরের আমানউল্লাহপাড়ায় গিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরদিন সকালে আবার বাড়ি ফিরে আসেন।
ঘটনাস্থলের আড়াই শ মিটার উত্তরে সড়কের ধারে ঘর বেঁধে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রিকশাচালক আবদুর রশিদ (৫৩)। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে ঘরের শিশুরা মাঝেমধ্যে ভয়ে আঁতকে ওঠে। এখানে বসবাস করতে ভয় করছে। অভাবের সংসার। তাই অন্য কোথাও গিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই।
গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রাঙাদিয়া গ্রামে ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার কারখানার ১ নম্বর ইউনিটে তরল অ্যামোনিয়া গ্যাসের একটি ট্যাংক বিকট শব্দে ফেটে যায়। ৫০০ টন ধারণক্ষমতার ট্যাংকটিতে দুর্ঘটনার সময় ২৫০ টন তরল অ্যামোনিয়া ছিল বলে কারখানার কর্মকর্তারা জানান। কারখানার আরও দুটি (৫০০ ও ৫০০০ টন ধারণক্ষমতার) অ্যামোনিয়া ট্যাংক আছে। দুর্ঘটনায় এ দুটি ট্যাংক অক্ষত রয়েছে।
স্থানীয় বারশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় যাতে আর না ঘটে, সে জন্য বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে ডিএপি, সিইউএফএল ও কাফকোর সব যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। তিনি বলেন, আতঙ্কের কারণে বন্দর গ্রাম ছাড়াও পশ্চিমচাল, দুধকুমড়া, পারকি ও গোবাদিয়া গ্রামের ১০-১২ হাজার মানুষ রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রাত আড়াইটা-তিনটার দিকে অনেকে ঘরে ফিরে এলেও বহু মানুষ রাতে চট্টগ্রাম শহরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যায়।
দুর্ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া ৫৩ জনকে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নদীর ওপারে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নদীর ওপারে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মূল ফটকে দায়িত্ব পালন করছিলেন আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ গ্যাসের গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখ জ্বালাপোড়া করে। কয়েক মিনিট পর ধোঁয়ার মতো গ্যাস আসতে থাকে। এরপর সইতে না পেরে দৌড়ে বিমানবন্দরের ভবনের দিকে ছুটে যাই। মানুষ তখন রাস্তায় ছোটাছুটি করতে থাকে। সবাই বিমানবন্দর ভবনে আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
ডিএপি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটেছে। তাই আমরা আশপাশের কারখানা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছি।’
‘
কৃপ্র/ বিকাশ/কে আহমেদ/এম ইসলাম