কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা দিতে কৃষকদের ট্যাব দেবে সরকার। একই সঙ্গে কৃষকদের তথ্য সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ‘ই-কৃষির মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা জোরদারকরণ ও ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদেরও ট্যাব সরবরাহ করা হবে। থবর অনলাইন পোর্টাল দ্য রিপোর্টের ।
কৃষি ব্যবস্থাপনাকে তথ্য-প্রযুক্তির আওতায় আনতে সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি শীঘ্রই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান মো. মনজুরুল আনোয়ার। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার কৃষক লিডার বা রিসোর্স কৃষকদের ট্যাব দেওয়া হবে। আইপিএম (সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা), আইসিএম (সমন্বিত শস্য ব্যবস্থাপনা) ক্লাবের কৃষকরা এটা পাবেন। তাদের অ্যাপস ব্যবহারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে ।
মনজুরুল আনোয়ার বলেন, ‘কৃষকরা ট্যাবের মাধ্যমে কৃষি সংক্রান্ত নানা ধরনের সেবা ঘরে বসে পাবেন। কৃষি অফিস বা অন্য কোথাও কৃষকদের যেতে হবে না। ট্যাবের মাধ্যমে কোন ফসল উৎপাদন করতে হবে, উৎপাদন সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত তথ্য পাবে। ফসলের রোগ-বালাই ও এর প্রতিকারের বিষয়ে তথ্য পাবে। আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যও কৃষক তাৎক্ষণিক পেয়ে যাবেন।’
ট্যাবে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারগুলো ইনস্টল করা থাকবে ও এ বিষয়ে অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে যুগ্ম-প্রধান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ডাটাবেজও তৈরি করা হবে। প্রত্যেক কৃষককে একটি কার্ড দেওয়া হবে। এ কার্ডে কৃষকের সব তথ্য থাকবে। ব্যাংকে গেলে এ কার্ড দিয়ে সে ঋণ নেবে, আর ভেরিফিকেশনের দরকার হবে না। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীরা জানতে পারবেন কৃষকের কী অবস্থা। কোন কৃষককে কী উন্নয়ন করা দরকার।
আপাতত এক কোটি ৫৫ লাখ কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তবে সরকারের লক্ষ্য আড়াই কোটি কৃষকের ডাটাবেজ করা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্যাবের দাম ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্যাবের সঙ্গে ইন্টারনেট দেওয়া না হলে উদ্দেশ্য সফল নাও হতে পারে। এজন্য কৃষকদের ইন্টারনেটের খরচও বহন করবে সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এ প্রকল্পটি প্রণয়ন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়। প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন থাকায় তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভারতে ই-কৃষি সম্প্রসারণ সেবা চালু হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ই-কৃষি নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার মতো কাজ করছে। এর কোন সমন্বয় নেই। মূলত সরকার লোক ভাড়া করে এখন ই-কৃষি সেবা দিচ্ছে। খরচও বেশি। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেবাটা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা দিতে পারবেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ডিজটালি কো-অর্ডিনেটেড প্ল্যাটফরম করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে (এসও) আড়াই হাজার কৃষি পরিবারকে সহায়তা দিতে হয়, এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। কৃষি সংশ্লিষ্ট আপডেটেড ইনফরমেশনগুলো সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য কৃষকের কাছে যাচ্ছে না। এখন কৃষক শুধু খাওয়ার জন্যই পণ্য উৎপাদন করে না, তার অনেক বাজার সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যাগুলো থাকবে না।’
তিনি আরও জানান, যে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছে তাদের ট্র্যাকিং করা দরকার। একজন কৃষক কোথা থেকে কথা বলছে সে তথ্যও দরকার। তবে সঠিকভাবে তথ্য দেওয়া যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আমরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (এসএএও) ট্র্যাকিং করতে পারব যে, কোন স্থান থেকে দেখা যাবে তারা মাঠে কাজ করছে কি-না।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত এসএএও-দের সঙ্গে কৃষকের তথ্য আদান-প্রদান সহজ হবে। এজন্য সব এসএএও-দের ট্যাব দেওয়া হবে। সব এসএএও ও কর্মকর্তার করপোরেট নম্বর থাকবে। এ নম্বরগুলো কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।
দেশের বর্তমানে ১১ হাজারের মতো এসএএও রয়েছেন। কোন কৃষক সেবার জন্য সিস্টেমে ফোন দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের এসএএও’র কাছে চলে যাবে। এসএএও জবাব দিতে না পারলে সেকেন্ডের মধ্যে তা কৃষি কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। এজন্য সহজ একটা নম্বর চালু করা হবে। কৃষক যে কোন ফোন থেকে সহজেই সেখানে ফোন করতে পারবেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বর্তমানে কৃষি সংক্রান্ত রিপোর্টিং মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে হয়। ট্যাব পাওয়ার পর এসএএএও’রা শস্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য তাদের ট্যাবে ইনপুট দেবেন। এ প্রতিবেদন যে কেউ, যে কোন স্থান থেকে দেখে নিতে পারবেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা। এ প্রকল্পের আওতায় এসএএও-দের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে একটা পোর্টাল করা হবে। কৃষি উন্নয়নে কাজে লাগে এমন নিত্যনতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির বিষয়গুলো এ পোর্টালে থাকবে। এ ছাড়া ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতি চালু করা হবে। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালক কিংবা পরিচালকদের মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। যে কোনো মিটিং বা কোথাও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে তারা অফিসে বসে থেকেই তা দেখতে পারবেন।
কৃপ্র/কে আহমেদ/ এম ইসলাম