কৃষি প্রতিক্ষণ চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার কারখানার ব্যবস্থাপনা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। অভাব ছিল রক্ষণাবেক্ষণেরও। এসব কারণেই কারখানাটির গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি। দুর্ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২২ আগস্ট রাতে ডিএপি-১ প্লান্টের ৫০০ টন ধারণক্ষমতার একটি অ্যামোনিয়া রিজার্ভ ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণে কারখানার ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— প্লান্ট-১-এর ট্যাংকটিতে তিন বছর আগে ত্রুটি ধরা পড়ার পরও তা সংস্কার না করা। এছাড়া অকার্যকর ছিল ট্যাংকটির প্রেসার সেফটি ভাল্ভ। ৫০০ টন অ্যামোনিয়া গ্যাসের চাপ ধরে রাখতে না পারায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
কারখানা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ত্রুটি চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, কারখানাটিতে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই বাণিজ্য ও মানবিক বিদ্যার। এছাড়া প্লান্ট পরিচালনায় নিয়োজিতদের মধ্যে রসায়নবিদ্যায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেয়ার কথা থাকলেও ডিএপি সার কারখানার ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে।
তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, কারখানাটির বর্জ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও তা ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ছিল। কারখানাটির নিয়মিত বর্জ্য আশপাশের নালা ও খালে গিয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের পর একই সঙ্গে অনেক বর্জ্য নিঃসরণ হওয়ায় তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নিঃসরিত অ্যামোনিয়া গ্যাসে মারা পড়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী। কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুব্যবস্থা থাকলে এ ক্ষতি এড়ানো যেত।
দুর্ঘটনার জন্য সার কারখানার ব্যবস্থাপনা ত্রুটির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনও।
মেজবাহ উদ্দিন রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে গেছে। তদন্তে কারখানার যথেষ্ট ত্রুটি পেয়েছি। দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দিলে এমন ঘটনা ঘটত না। আমরা স্থানীয়দের বক্তব্য সংগ্রহ করেছি। সবার সঙ্গে কথা বলে জড়িতদের চিহ্নিত করেছি। এ দুর্ঘটনার জন্য কারখানার ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর তা মোকাবেলায়ও প্রস্তুতির অভাব ছিল তাদের। কারখানার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা কাজ করেনি।
এদিকে বিস্ফোরিত অ্যামোনিয়া ট্যাংক ও ডিএপি প্লান্ট পরিদর্শন করেছে চীনা প্রতিনিধি দল। ২০০৬ সালে চায়না কমপ্লান্ট নামের চীনা প্রতিষ্ঠান ডিএপি প্লান্টটি নির্মাণ করেছিল। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চায়না কমপ্লান্টের ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে দুর্ঘটনাকবলিত ডিএপি প্লান্টে যায়। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন বিসিআইসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও। উল্লেখ্য, ২২ আগস্ট রাতে ডিএপি-১ প্লান্টের ৫০০ টন ধারণক্ষমতার একটি অ্যামোনিয়া রিজার্ভ ট্যাংক বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।
কৃপ্র/ বিকাশ/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম