কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপকূল রক্ষা বাঁধের প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশের ২৪টি স্থানে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করা ও চিংড়ির ঘেরে লবণপানি ঢোকানোর জন্য বাঁধে ছিদ্র করায় ভাঙন থামছেই না। পাউবো বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ নয়টি স্থানের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বাকি ১৫টি স্থানের সাড়ে ৭ কিলোমিটার অংশের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ভাঙন আর প্লাবনের আতঙ্কে দিন কাটছে উপকূলীয় কয়েক হাজার পরিবারের। খবর প্রথম আলো অনলাইনের।
সম্প্রতি শ্যামনগরের কাশিমাড়ি, গাবুরা ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপকূল রক্ষা বাঁধের ভাঙন এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢেউয়ের আঘাত আর স্থানবিশেষে চরের মাটি দেবে যাওয়ায় বাঁধ একেবারে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ স্থাপন, গেট নির্মাণ ও বাঁধের ওপর ‘নাইনটি’ (পানি তোলার কল) বসিয়ে নদীর লবণপানি ওঠানামা করানো অব্যাহত রয়েছে। এতে কোনো কোনো স্থানে বাঁধ রীতিমতো সরু আইলে পরিণত হয়েছে। ঝাঁপালি, ঘোলা ও দুর্গাবাটি এলাকায় উপকূল রক্ষা বাঁধের মাত্র এক থেকে তিন হাত অবশিষ্ট রয়েছে। জোয়ারে প্রতিদিনই একটু একটু করে বাঁধ নদীতে বিলীন হচ্ছে। কোথাও আবার স্থানীয় উদ্যোগে বাঁধের বাইরের অংশের সঙ্গে নেট জাল জড়িয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
পাউবো সূত্র বলছে, পানির চাপ ও বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেলেই শ্যামনগরের ১১টি ইউনিয়নকে রক্ষাকারী ৫ ও ১৫ নম্বর পোল্ডার দুটির বিভিন্ন অংশ পাশের খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও আড়পাঙ্গাশিয়া নদ-নদীতে ধসে পড়বে। ৫ নম্বর পোল্ডারের ঝাঁপালি ও ঘোলা এলাকার ৯৫০ মিটার অংশ যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে। এ ছাড়া পশ্চিম দুর্গাবাটির দুটি স্থানে ১ হাজার ৪০০ মিটার, কৈখালীর ৫০০ মিটার, কালিঞ্চির ৬০০ মিটার, সিংহড়তলী ও কদমতলার ৪০০ মিটার এবং দাতিনাখালী ও বিড়ালাক্ষীর সাড়ে ৭০০ মিটার বাঁধও বিলীনের অপেক্ষায়।
অন্যদিকে ১৫ নম্বর পোল্ডারের চকবারার ৫০০ মিটার, কালীবাড়ি, গাবুরা ও পার্শ্বেমাড়ির ১ হাজার মিটার এবং জেলেখালী অংশের ১ হাজার মিটার বাঁধ মারাত্মক ভাঙনের মুখে পড়েছে। তবে ভেটখালীর শেখবাড়ি, কদমতলা, দাতিনাখালী, পশ্চিম দুর্গাবাটি, ৯ নম্বর সোরা, নাপিতখালী, ঝাঁপালিসহ নয়টি স্থানের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
শ্যামনগর আতরজন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধ নদীতে বিলীন হলে শ্যামনগরের আটটি ইউনিয়নসহ পাশের কালীগঞ্জ উপজেলার আরও সাতটি ইউনিয়ন প্লাবিত হবে। সে ক্ষেত্রে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলা-পরবর্তী পরিস্থিতির মুখে পড়বে গোটা উপকূলের লোকজন।
উপজেলার কাশিমাড়ির তরফদারপাড়ার হাসান তরফদার, ঝাঁপালির মোখলেছুর রহমানসহ কয়েকজন বলেন, আইলার সময় ঝাঁপালি ও ঘোলা এলাকার বাঁধের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশ বিলীন হয়। তখন স্থানীয় ও সরকারি উদ্যোগে অস্থায়ী ভিত্তিতে রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরে আর ওই রিং বাঁধ সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং পাশের চিংড়িঘের মালিকেরা বাঁধ ছিদ্র করায় ভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গোটা উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হবে।
বাঁধের ৫ ও ১৫ নম্বর পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা পাউবোর শাখা কর্মকর্তা নিখিল দত্ত বলেন, প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নয়টি স্থানের দেড় কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অন্য স্থানগুলোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চলছে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম