কৃষি প্রতিক্ষণ সিলেট : সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল থেকে কোম্পানীগঞ্জ সড়কের দুই পাশে ধানি জমিতে গড়ে উঠেছে পাথর ভাঙা কল। এসব মিলের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে ধানি জমিতে। আর পাথর ভাঙা ধুলোয় পুরো এলাকা থাকে ধোঁয়াচ্ছন্ন। এতে হারিয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি। সড়কটির দুই পাশে পাঁচ শতাধিক পাথর ভাঙা কল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে শতাধিক কল গড়ে উঠেছে ফসলি জমি দখল করে।
জানা যায়, ধোপাগুল থেকে শুরু হয়ে কিছু অংশ বাদে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে এসব পাথর ভাঙা কল। আগে সড়কের পাশে পতিত জমিতে গড়ে তোলা হতো এসব মিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে মিল গড়ে তোলা হচ্ছে ফসলি জমিতেই। হাওড় এলাকায় পানির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে পাথর ভাঙা কল। মিলের বর্জ্যে ভরাট হয়ে পড়ছে অধিকাংশ জমি। অন্যদিকে এসব বর্জ্য দিয়ে কৌশলে হাওড় ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ছালিয়া এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেক প্রতিবাদ করেছি। কোনো কাজ হয়নি। টাকার কাছে পরাজিত সবাই। পরিবেশ অধিদপ্তর কীভাবে তাদের অনুমতি দেয়, সেটাই বুঝতে পারছি না।’
শহর, পৌরসভা, উপজেলা সদর, হাসপাতাল, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০০ মিটার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ির ১০০ মিটার এবং প্রধান সড়ক-মহাসড়কের ৫০ মিটারের মধ্যে কোনো পাথর ভাঙা কল চালু না রাখার উল্লেখ রয়েছে ‘স্টোন ক্রাশিং ক্রাশার মেশিন স্থাপন নীতিমালা ২০০৬’-এ। অথচ এর কোনোটিই মানা হচ্ছে না সিলেটে।
’
স্থানীয়রা বলেছেন, ধোপাগুল এলাকা এখন অনেকটা শিল্প এলাকায় পরিণত হয়েছে। ধোপাগুল এলাকার সবখানেই মিল আর মিল। দিন দিন এসব এলাকায় ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে মিলের কারণে।
সিলেটের বৃহত্তর পাথর কোয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি। এসব কোয়ারির পাথর ভাঙার জন্য সিলেটজুড়ে গড়ে উঠেছে হাজারো মিল। শহরতলী থেকে শুরু করে পাথর কোয়ারি পর্যন্ত গড়ে ওঠা মিলে বিষিয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ।
পাথর ভাঙা কল মালিক আব্দুন নূর বলেন, ‘বাজার, আবাসিক এলাকা বা কোনো স্থাপনার পাশে মিল করলে বলা হয় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে, পরিবেশের ক্ষতি হবে। পতিত জমি বা জলাশয় ভরাট করলেও পরিবেশবাদীরা আপত্তি করেন। কৃষিজমিতে করলেও আপত্তি। এর বাইরে মিল মালিকরা জমি পাবে কোথায়? সব বিষয়ে আপত্তি করলে তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।’
এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মালিকরা আইনের ধারেকাছেও নেই। অনেক মিল ফসলি জমির ওপর গড়ে উঠেছে। তাদের অনেকবার নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। এগুলো বন্ধে শিগগিরই কঠোর অভিযানে নামব।’
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা বলেন, ‘মিলগুলো নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় সম্প্রতি পরিবেশের ভয়াবহতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের নোটিস দিয়ে অবগত করা হয়েছে। এগুলো বন্ধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া না হলে সিলেটের পরিবেশ বলতে আর কিছু থাকবে না।’
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, সিলেটের সব পাথর ভাঙা মিল একটি জায়গায় নিয়ে স্টোন ক্রাশার জোন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা মিল বন্ধ হয়ে যাবে।
কৃপ্র/ শ্রাবন/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম