কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বন্যার পানিতে রাজশাহী চিনিকল এলাকায় ১ হাজার ২১৫ একর জমির আখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজশাহী চিনিকলের একটি প্রতিনিধিদল বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ও গড়গড়ি এলাকার জলমগ্ন আখখেত পরিদর্শন করে। প্রায় এক মাস ধরে ওই এলাকার আখখেত পানিতে ডুবে রয়েছে। খবর প্রথম আলো অনলাইনের।
রাজশাহী চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, চিনিকল এলাকায় এবার ১২ হাজার ৩৮৭ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। তার মধ্যে পবা উপজেলার শ্যামপুর, বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ও চকরাজাপুর ইউনিয়নের চর এলাকার আখের জমিতে প্রায় এক মাস ধরে পানি জমে রয়েছে।
চর শ্যামপুর বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়নের চরের কোনো কোনো এলাকার আখ একেবারেই তলিয়ে গেছে। চিনিকল কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, ১১৫ একর জমির আখ তলিয়ে গেছে। এই আখ আর কোনো কাজে লাগবে না। পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া আরও ১ হাজার ১০০ একর জমির আখ সম্পূর্ণ তলিয়ে না গেলেও শুধু মাথাটুকু বের হয়ে আছে। এসব আখও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চর শ্যামপুর এলাকায় আখখেতের শুধু পাতা বের হয়ে আছে। মাথা ডুবে গেছে। স্থানীয় চাষিরা বলেন, পাতা জেগে থাকলেও এই আখ আর কোনো কাজে লাগবে না।
বাঘা উপজেলার বেঙ্গাড়ি গ্রামের কলেজশিক্ষক আবদুল জলিল গত বৃহস্পতিবার বলেন, তাঁর পরিবারের ১৩ বিঘা জমির আখ সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এক মাস ধরে আখের জমিতে পানি জমে রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে খেতটি একেবারেই তলিয়ে গেছে। আখের মাথার ওপর দিয়ে স্রোত বয়ে যাচ্ছে। তবে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে তা এত ধীরে কমছে যে আরও লম্বা সময় আখগুলোকে পানিতে ডুবে থাকতে হবে। পরে এই আখ আর কোনো কাজে লাগবে না। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই আখগুলো মরে পচে যাবে।
আবদুল জলিল আরও বলেন, চর এলাকার মাটি এত উর্বর যে একবার আখ রোপণের পর নয় বছর পর্যন্ত আর রোপণ করতে হয়নি। বছরের পর বছর মুড়ি আখ হয়েছে। এবার সেই মুড়িও শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, তাঁর এক বিঘা জমিতে গত বছর ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ মণ আখ হয়েছে। এবারও একই ফলন আশা করেছিলেন।
উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের আবদুল মান্নান বলেন, তাঁর ১২ বিঘা জমিতে আখ ছিল। পুরোটাই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ আখ আর কোনো কাজে আসবে না। অনেক দিন পর এবার বন্যা আখচাষিদের সর্বনাশ করে গেল।
পলাশীফতেপুর গ্রামের দুলাল সরকারের ১০ বিঘা জমিতে আখ ছিল। সবটাই তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, কয়েক বছর যাবৎ আখ লাভজনক ফসল ছিল। এবার বন্যা তাঁদের অনেক ক্ষতি করে গেল।
রাজশাহী চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল গত বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করে এসেছে। তারা জানিয়েছে, চিনিকল এলাকার ১১৫ একর জমির আখ একেবারে তলিয়ে গেছে। এই আখ পানি নেমে যাওয়ার পর নষ্ট হয়ে যাবে। আর ১ হাজার ১০০ একর জমির আখ সম্পূর্ণ না হলেও বেশির ভাগ অংশই তলিয়ে গেছে। এই ১ হাজার ১০০ একর জমির ফলনও আর আগের মতো হবে না।
কৃপ্র/ এম ইসলাম