কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রির জন্য হাটগুলোতে গরু আনা হচ্ছে। বাজারে সাধারণত বড় গরুর দিকে ক্রেতাদের মনোযোগ বেশি। নিজের সাধ্যের মাঝে বড় গরু কিনতে চায় সবাই। বাজারে যেখানেই বড় গরু দেখা যাচ্ছে, সেটিকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড় চোখে পড়ে।
কিন্তু গত কয়েকদিন ঢাকার সিটি কর্পোরেশনগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, কিভাবে ‘স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক মোটা’ গরু চিনতে হবে। এসব বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে , “মধ্যম আকারের চঞ্চল গরু কিনুন। অতিরিক্ত মোটা ও অলস গরু কিনবেন না।”
এদিকে অনেক ক্রেতা মনে করেন, ঔষধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরু সনাক্ত করার একটি পদ্ধতি থাকা দরকার। সবচেয়ে ভালো হয়, এ ধরনের গরু যাতে বাজারে আসতে না পারে। খবর বিবিসি বাংলার । ঢাকার কচুক্ষেত এলাকায় গরুর হাটে কয়েকজন ক্রেতা জানালেন ঔষধ দিয়ে গরু কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করার বিষয়টি তাদের খুব একটা নজরে থাকেনা।
একজন ক্রেতা আসিফ আহমেদ বলেন, ” ঢাকা শহরের ভেতরে সবাই মাংসটাই হিসেব করে। গরু যত বড় হয় ততই ভালো।” আসিফ আহমেদের মতো এরকম আরো অনেক ক্রেতার দেখা মিলল যারা বড় গরু কিনতে আগ্রহী।
কিন্তু ঔষধ দিয়ে গরু কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে কিনা সেদিকে কেউ-কেউ নজর দিচ্ছেন। একজন ক্রেতা মইনুল ইসলাম জানালেন এ ধরনের গরুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি একটি প্রাথমিক ধারণা নিয়ে বাজারে এসেছেন।
কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেল, বেশিরভাগ গরু এসেছে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা এবং যশোর এলাকা থেকে। খামারে গরু পালন করে কোরবানির বাজারের জন্য এসব গরু লালন-পালন করা হয়েছে। সব বিক্রেতাই দাবী করছেন তার গরুটি ঔষধ দিয়ে মোটাতাজা করা হয়নি।
পাবনার আতাইকুলা থেকে কচুক্ষেত বাজারে বিক্রেতা আবুল হোসেন প্রমানিক চারটি গরু এনেছেন। এ গরুগুলোর দাম দেড় লাখ টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন তিনি। তিনি দাবী করলেন গত ছয়মাসে তিনি ‘বাড়তি যত্ন’ নেবার কারণে গরুগুলো বেশ স্বাস্থ্যবান হয়েছে। কিন্তু যে গরুটির দাম তিনি সাড়ে চার লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন, সেটি এতো কম সময়ে এতোটা বড় হলো কিভাবে?
বিক্রেতা মি: প্রমানিক বলেন , ” গরুটারে অনেক খাওয়ানি পড়ছে। গরুটার তিন-চার বছর বয়স ছিলে। ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। তারপরে এত বড় হয়া গেছে।”
ঢাকার অনেক ক্রেতা মনে করেন, ঔষধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরু সনাক্ত করার একটি পদ্ধতি থাকা দরকার। সবচেয়ে ভালো হয়, এ ধরনের গরু যাতে বাজারে আসতে না পারে।
সিটি কর্পোরেশন তাদের বিজ্ঞাপনে পরামর্শ দিচ্ছে, যেসব গরু স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেনা সেগুলো কেনা উচিত নয়। যেসব গরুকে স্পর্শ করলে দ্রুত সাড়া দেয়, সেগুলো কেনার পরামর্শ দিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা:) সাইদুর রহমান জানালেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ” আমরা যদি রেনডমাইজ ওয়েতে কিছু সন্দেহজনক মোটা গরু থেকে রক্ত বা ইউরিন নিয়ে ওদের ল্যাবে পাঠাই। কিন্তু ওরা বলল যে ওদের ল্যাবে সে ক্যাপাসিটি এখনো পর্যন্ত বিল্ড-আপ করেনি।” এ ধরনের পরীক্ষার বিষয়ে প্রাণি সম্পদ বিভাগ আগামী বছর চেষ্টা করবে বলে সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হয়েছে।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন ঔষধের সাহায্যে মোটাতাজা করা গরু এড়িয়ে চলতে ক্রেতাদের সচেতনতাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। তারা মনে করেন, ক্রেতারা এ ধরনের গরু না কিনলে বিক্রেতারা ঔষধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে।
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম