কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জনসংখ্যার ঘনত্ব, গ্রামীণ দারিদ্র ও অর্থনীতিতে কৃষি নির্ভরতা এই ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ অন্যতম। ইতিমধ্যে এর প্রভাবও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলে লবণাক্ত পানি চলে আসায় জলবায়ু শরণার্থী তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে।
সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষি নির্ভরতা পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৮৩ লাখ মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি রয়েছে এমন এলাকায় বসবাস করেন। তবে এই হারে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ এই ঝুঁকিতে চলে আসবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছয় নম্বরে। গত আগস্টের মৌসুমি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় দেশের ১৬টি জেলার ৩০ লাখ মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন করেছে।
যে দিক থেকে সমূহ বিপদ আসার সম্ভাবনা রয়েছে বঙ্গোপসাগর তার একটি। দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বসবাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই এলাকায় মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানির লবণাক্ততা কৃষি ও মানুষের জীবন ধারণের পদ্ধতিগত পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে এখন প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেতরে লবণ পানি চলে আসছে। স্বাস্থ্যের ওপর লবণাক্ত পানি পানের প্রভাব এলাকাগুলোতে ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক গত ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ লবণাক্ত পানি পান করতে করতে এর স্বাদের প্রতি মানুষে অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। এর ফলে মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় ২০৫০ সালের মধ্যে আরো ৭৬ লাখ মানুষ লবণাক্ততার শিকার হতে পারেন।
সুন্দরবনের জন্যও এখানে বিপদ রয়েছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা আর মাত্র ৪৫ সেন্টিমিটার বাড়লে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে। ২০১৩ সালে এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়, সমুদ্রের উচ্চতা বাড়া নিয়ে আগে যা আশঙ্কা করা হত সুন্দরবনের জন্য এই ঝুঁকি বাস্তবে আরো বেশি।
তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চুক্তি অনুমোদন নতুন করে আশা দেখাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মারাক্কেচে কপ-২২ সম্মেলনে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট