কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বিদেশি রেশম সুতা ও বস্ত্রের আমদানি শুল্ক কম হওয়ায় দেশি সুতার ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে কৃষকেরা রেশমের গুটি উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। লাভজনক না হওয়ায় অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন। বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। খবর প্রথম আলো অনলাইনের।
রেশম উন্নয়ন বোর্ডের এক বছরের (২০১৬-১৭) কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, রেশমশিল্পকে বাঁচাতে এবং উৎপাদন বাড়াতে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে বিদেশি সুতা ও বস্ত্রের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করবে। দেশের রেশমশিল্পকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বোর্ডের উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আখতারুল ইসলামের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেশমচাষিদের বেশির ভাগ প্রান্তিক ভূমিহীন। তাঁদের যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতাও অপ্রতুল। তাঁদের উৎপাদিত সুতা ও গুটি বাজারজাত করায় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যে কারণে চাষিরা পেশা পরিবর্তন করছেন, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেশম কারখানা। বর্তমানে রেশমের চাষ প্রকল্পনির্ভর হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রেও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব রয়েছে।
জানতে চাইলে কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে বর্তমানে রেশমশিল্পের অবস্থা নাজুক। কৃষকেরা তুঁতগাছ ও গুটি পোকার চাষ বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
এটা বন্ধ করতে হলে রেশমশিল্প খাতে সরকারিভাবে প্রণোদনা দিতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশি সুতা ও বস্ত্রের আমদানি শুল্ক বাড়াতে হবে। কমিটি এ বিষয়ে আরও আলোচনা করে সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।
রেশম বোর্ডের কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, আগামী এক বছরে ১২ হাজার প্রান্তিক চাষিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে। বর্তমানে ১৫ লাখ তুঁতগাছের চারা উৎপাদন ও বিতরণ করা হয়। এর সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা হবে।
বর্তমানে ৪০০ টন রেশম গুটি উৎপাদিত হয়। এর উৎপাদন ৪৩০ টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪৩ টন রেশম সুতা উৎপাদনের কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত হয় ৪০ টন।
রেশমশিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং গবেষণার মাধ্যমে রেশম প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বর্তমানে ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্রকল্প চালু আছে। আগামী বছর এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে রেশম চাষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আওতায় ৩৩ জেলার ৯০টি উপজেলায় ৪১২ জন চাষি তুঁতগাছের চাষ করছেন। তাঁদের গাছের সংখ্যা ৫৫ হাজার ২৫৩টি।
কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আযম, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও এনামুর রহমান অংশ নেন।